পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

বাচস্পতি মহাশয় ঠাকুরদাসকে ব্যাকরণ শিক্ষা দিবার ব্যবস্থা করিলেন; কিন্তু রামজয় আশু অর্থকরী ইংরাজী-বিদ্যা শিক্ষার জন্য তাঁহাকে অনুরোধ করিলেন; যেহেতু তিনি পৈতৃক সম্পত্তি ভ্রাতৃবৰ্গকে প্রদান করিয়াছিলেন, তাঁহার কিছুমাত্র সম্পত্তি ছিল না। একারণ, যাহাতে পুত্রটী শীঘ্র উপায়ক্ষম হইতে পারে, এরূপ বিদ্যাশিক্ষার উপদেশ প্রদান করিলেন। তৎকালে কলিকাতায় কোনও ইংরাজী বিদ্যালয় ছিল না। বাচস্পতি মহাশয়, ইংরাজী শিক্ষা দিবার জন্য একজন দালালকে অনুরোধ করিলেন; দালাল, বাচস্পতি মহাশয়ের অনুরোধের বশবর্ত্তী হইয়া স্বয়ং শিক্ষা না দিয়া, ইংরাজীভাষায় সুশিক্ষিত জাহাজের সীপ্‌সরকার, জনৈক কায়স্থকে শিক্ষা দিবার জন্য অনুরোধ করেন। সীপ্‌সরকার, প্রাতে ও সন্ধ্যার পর রীতিমত ইংরাজী-ভাষা শিক্ষা দিতে প্রবৃত্ত হইলেন। অল্পদিনের মধ্যেই ঠাকুরদাস এক প্রকার কাজের লোক হইলেন; তাহা দেখিয়া রামজয়, ঠাকুরদাসকে বলিলেন যে, ঈশ্বর তোমার ভাল করিবেন, আমি ঈশ্বরের আরাধনাভিলাষে পুনর্ব্বার তীর্থপর্য্যটনে যাত্রা করিতেছি। ইহাতে ঠাকুরদাস অত্যন্ত দুঃখিত হইলেন; তিনি এ সংবাদ বাটীতে লিখিলেন। কিছু দিন পরে শিক্ষক, ঠাকুরদাসকে অতি শীর্ণকায় দেখিয়া জিজ্ঞাসা করিলেন, “তুমি দিন দিন শীর্ণ হইতেছ কেন?” তাহাতে তিনি উত্তর করিলেন, “মহাশয়! দিবা দুই প্রহরের সময় ভোজন করি, রাত্রিতে ভোজন হয় না।” ইহার কারণ জিজ্ঞাসায় ঠাকুরদাস বলিলেন, “সন্ধ্যার অব্যবহিত পরেই বাচস্পতি মহাশয়ের ভবনে লোকের ভোজনের ব্যবস্থা শেষ হইয়া যায়। আমি রাত্রি দশটার পর আপনার বাটী হইতে তথায় যাই, সুতরাং আমার ভোজন হয় না। একারণ অনাহারে ক্রমশঃ দুর্বল হইতেছি।” তাহাতে শিক্ষক বলিলেন, “তুমি যদি পাক করিতে পার, তাহা হইলে আমার বাসায় অবস্থিতি কর।” তাহাতে ঠাকুরদাস সম্মত হইয়া, দয়ালু শিক্ষকের বাসায় অবস্থিতি করিয়া ইংরাজী শিখিতে লাগিলেন। মধ্যে মধ্যে এক এক দিন শিক্ষকের কার্য্যবাহুল্যপ্রযুক্ত বাসায় আসিতে অধিক রাত্রি