পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১১৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

স্ত্রীবিয়োগ হইলে, ঐ মৃতা-স্ত্রীকে শ্মশানে দাহ করিতে করিতেই কর্তৃপক্ষ বলিয়া থাকেন, যথাসর্ব্বস্ব বিক্রয় করিয়াও পুনরায় ত্বরায় বিবাহ দিতে হইবে, নচেৎ চলিবে না। দেখুন, স্পষ্টরূপে শাস্ত্রকারেরা বলিয়াছেন, পুরুষ-জাতি অপেক্ষা স্ত্রীজাতির দুর্জয় রিপুবর্গ অষ্টগুণ প্রবল; এমন স্থলে পতিবিয়োগের সঙ্গে সঙ্গে স্ত্রীলোকদিগের দুর্নিবার কামপ্রবৃত্তি কি অন্তর্হিত হয় যে, পিতামাতা বিধবাকন্যার বিবাহ দিতে ইচ্ছা করেন না! কি আশ্চর্য্য়, কন্যার ভ্রূণহত্যা করিতে এবং স্ত্রীহত্যা করিতেও সম্মত আছেন, কিন্তু শাস্ত্রানুসারে বিবাহ দিতে ইচ্ছা করেন না। অনেক সম্ভ্রান্ত লোককেও কন্যার ভ্রূণহত্যা করিতে শ্রবণ করা যায়, কিন্তু উহাঁরাই সমাজে ভদ্রলোক বলিয়া পরিগণিত হন।

 অগ্রজ মহাশয়ের বিধবা-বিবাহের পুস্তক মুদ্রিত হইবার কিছুদিন পূর্ব্বে, কলিকাতার অন্তঃপাতী পটলডাঙ্গানিবাসী বাবু শ্যামাচরণ দাস কর্ম্মকার, স্বীয় দুহিতার বৈধব্য-দর্শনে দুঃখিত হইয়া, মনে মনে সঙ্কল্প করিয়াছিলেন, যদি ব্রাহ্মণপণ্ডিতেরা ব্যবস্থা দেন, তবে পুনর্ব্বার কন্যার বিবাহ দিব। তদনুসারে তিনি সচেষ্ট হইয়া, বিধবাবিবাহের শাস্ত্রীয়তা-প্রতিপাদক এক ব্যবস্থা-পত্র সংগ্রহ করেন। উহাতে ৩ কাশীনাথ তর্কালঙ্কার, ভবশঙ্কর বিদ্যারত্ন, রামতনু তর্কসিদ্ধান্ত, ঠাকুরদাস চূড়ামণি, হরিনারায়ণ তর্কসিদ্ধান্ত, মুক্তারাম বিদ্যাবাগীশ প্রভৃতি কতকগুলি ব্রাহ্মণ পণ্ডিতের স্বাক্ষর ছিল। ইহাঁরাই এতদ্দেশে সর্ব্বপ্রধান স্মার্ত ছিলেন। ইহাঁরা সকলেই ঐ ব্যবস্থায় স্ব স্ব নাম স্বাক্ষর করিয়াছিলেন বটে, কিন্তু আশ্চর্য্য়ের বিষয় এই, কিছুদিন পরে তাঁহারাই আবার বিধবাবিবাহের বিষম বিদ্বেষী হইয়া উঠেন। বাবু শ্যামাচরণ দাসের সংগৃহীত ব্যবস্থা, মুক্তারাম বিদ্যাবাগীশের নিজের রচিত এবং ব্যবস্থাপত্র বিদ্যাবাগীশের স্বহস্ত লিখিত। কিছুদিন পরে যখন ঐ ব্যবস্থাউপলক্ষে রাজা রাধাকান্তদেবের ভবনে বিচার উপস্থিত হয়, তৎকালে ভরতচন্দ্র শিরোমণি মহাশয় প্রভৃতি মধ্যস্থ ছিলেন যে, কে বিচারে জয়ী হন। ভবশঙ্কর বিদ্যারত্ন, বিধবাবিবাহের শাস্ত্রীয়তা-পক্ষ রক্ষার নিমিত্ত, নবদ্বীপের প্রথম স্মার্ত্ত