পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।
১২০

করিবে। বিশেষত ভ্রূণহত্যা প্রভৃতি মহাপাপকর ও জাতিনাশকর কার্য্যগুলির হ্রাস হইবে।) পিতৃদেব বলিলেন, “বাবা! ধরিবার পূর্ব্বে ভাবা উচিত, ধ'রেছ ছেড়ে না, প্রাণ পর্য্যন্ত স্বীকার করিও। এই অভিপ্রায়েই পূর্ব্বে বীরসিংহার চণ্ডীমণ্ডপে,আমরা উভয়েই তোমাকে বলিয়াছিলাম।”

 বিধবাবিবাহ-পুস্তক প্রচারিত হইবামাত্র, লোকে এরূপ আগ্রহ-প্রদর্শন-পূর্ব্বক গ্রহণ করিতে আরম্ভ করিলেন যে, এক সপ্তাহের অনধিক কালমধ্যেই প্রথম মুদ্রিত দুই সহস্র পুস্তক নিঃশেষ হইয়া গেল। তদ্দর্শনে উৎসাহান্বিত হইয়া অগ্রজ মহাশয়, আবার তিন সহস্র পুস্তক মুদ্রিত করিয়াছিলেন; তাহাও অনতিবিলম্বে শেষ হইতে দেখিয়া, পুনর্ব্বার দশ সহস্র পুস্তক মুদ্রিত করেন। ঐ পুস্তক এরূপ আগ্রহ-সহকারে সর্ব্বত্র পরিগৃহীত হইতেছে দেখিয়া, তিনি পরম আহ্লাদিত হইলেন। কি বিষয়ী, কি শাস্ত্রব‍্যবসায়ী, অনেকেই উক্ত প্রস্তাবের উত্তর লিখিয়া, মুদ্রিত করিয়া, সর্ব্বসাধারণের গোচরার্থে প্রচার করিয়াছিলেন। যে বিষয়ে সকলে অবজ্ঞা ও অশ্রদ্ধা প্রদর্শন করিবেন বলিয়া অগ্রজের স্থিরসিদ্ধান্ত ছিল, সেই বিষয়ে অনেকে শ্রম ও ব্যয় স্বীকার করিয়া, উত্তর-পুস্তক মুদ্রিত ও প্রচারিত করিয়া, তাঁহার নিকট প্রেরণ করেন। অগ্রজ মহাশয়, ঐ উত্তর-পুস্তকগুলি দেখিয়া, শাস্ত্রজলধি-মন্থন-পূর্ব্বক প্রত্যেকের হিসাবে প্রত্যেক প্রত্যুত্তর পরিচ্ছেদগুলি লিখিয়া, একত্র সংগ্রহ করিয়া, দ্বিতীয় পুস্তক মুদ্রিত করেন। এই পুস্তক প্রচারিত ও সৃষ্ট হইবামাত্র, সমস্ত ভারতবাসী নিরুত্তর ও মনে মনে সন্তোষলাভ করিয়া, মৌখিক অসন্তোষকর বাক্যসকল প্রকাশ করিতে লাগিলেন। ভারতবাসী হিন্দুরা সকলেই বিধবা-বিবাহের শাস্ত্রীয়তা স্বীকার করিয়াও দেশাচারের একান্ত অনুগত দাস বলিয়া,বিবাহে পরাঙ্মুখ রহিলেন।

 অগ্রজ মহাশয়, ধর্ম্মশাস্ত্রের বিচারে বাঙ্গালা-দেশের প্রধান প্রধান পণ্ডিত সকলকে পরাজয় করিলেন। ইহাতে কি স্ত্রী, কি পুরুষ, কি ভদ্র, কি অভদ্র সকল সম্প্রদায়ের লোকে অগ্রজ মহাশয়ের গুণানুবাদ করিতে লাগিল।