পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৩৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৩৪
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

শিক্ষার প্রচলন হওয়া দুষ্কর। অতএব তুমি যেমন হুগলি, বর্দ্ধমান, নদীয়া ও মেদিনীপুর এই জেলা-চতুষ্টয়ের স্থানে স্থানে মডেল-স্কুল অর্থাৎ আদর্শ-বঙ্গবিদ্যালয় স্থাপন করিয়া পরিদর্শন করিতেছ, সেইরূপ মফঃস্বলের স্থানে স্থানে বালিকাবিদ্যালয় স্থাপন করিয়া, হিন্দু-স্ত্রীশিক্ষা প্রচলনের জন্য তোমার চেষ্টা করা কর্ত্তব্য।” তজ্জন্য অগ্রজ মহাশয়, আন্তরিক যত্ন ও পরিশ্রম-সহকারে বর্দ্ধমান, নদীয়া, হুগলী ও মেদিনীপুর এই কয়েক জেলার মফঃস্বলে স্থানে স্থানে প্রায় শতাধিক বালিকাবিদ্যালয় স্থাপন করিলেন। প্রত্যেক বালিকাবিদ্যালয়ে দুইজন পণ্ডিত ও একটী চাকরাণী নিযুক্ত করিলেন এবং বিনামূল্যে বালিকাগণকে পুস্তকাদি প্রদান করিতে লাগিলেন। কয়েক মাস অতীত হইলে পর, ঐ সকল বালিকাবিদ্যালয়ের শিক্ষকগণের বেতনাদির বিল করিয়া, ডিরেক্টারের নিকট পাঠাইলেন; কিন্তু ডিরেক্টার ইয়ং সাহেব, ঐ বিল মঞ্জুর করিলেন না।

 ইতিপূর্ব্বে কথিত হইয়াছে, আদর্শ-বিদ্যালয় স্থাপন-সময়ে ডিরেক্টার ইয়ং সাহেবের সহিত অগ্রজ মহাশয়ের অপ্রণয় হওয়ায়, ডিরেক্টার ঐ সময় হইতে একাল পর্যন্ত তাঁহার ছিদ্রান্বেষণে তৎপর ছিলেন। এই সময়ে পার্লিয়ামেণ্টে কন্‌সারভেটিব পার্টি প্রবল হয় এবং তৎকালে লর্ড এলেন্‌বরা ভারতবর্ষে সাধারণ-শিক্ষার বিরুদ্ধে অভিপ্রায় প্রকাশ করেন। ডিরেক্টার ইয়ং সাহেবও ঐ মতাবলম্বী ছিলেন; সুতরাং ডিরেক্টার এক্ষণে এই ছিদ্র পাইয়া, বালিকাবিদ্যালয়ের বিলের প্রতিবাদ করেন। এই বিল পাশ করিতে অক্ষম হইয়া, অগ্রজ মহাশয়, লেপ্টেনেণ্ট গবর্ণরকে জানাইলেন। তিনি বলিলেন, “লর্ড এলেন্‌বরা ভারতবর্ষের শিক্ষাসমাজের ব্যয়-লাঘবের নিমিত্ত অভিপ্রায় প্রকাশ করিয়াছেন। বালিকাবিদ্যালয়ে গবর্ণমেণ্ট টাকা দিতে সম্মত নহেন। কিন্তু আমি তোমাকে বিদ্যালয় বসাইবার বাচনিক আদেশ দিয়াছি সত্য বটে অতএব তুমি আমার নামে ঐ সকল বালিকাবিদ্যালয়ের কয়েক মাসের বেতনের টাকা আদায় জন্য অভিযোগ কর; আবেদন করিলেই আমি