পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৬১

পারিয়া নিরুপায় হইয়া, স্ত্রী ও কন্যা লইয়া গৃহাভিমুখে গমন করিলেন। চারি টাকা করিয়া দিবার অঙ্গীকার করিয়াছেন শুনিয়া, তাঁহার ভগিনীদ্বয় সম্মত হইলেন। গুরুমহাশয়, কখনও কোন স্ত্রীকে আনিয়া নিকটে রাখিবার অভিপ্রায় প্রকাশ করিলে, ভগিনীরা খড়গহস্ত হইয়া উঠিতেন; সুতরাং তিনি কস্মিনকালেও আপন অভিপ্রায় সম্পন্ন করিতে পারেন নাই। ভঙ্গ-কুলীনদের ভগিনী, ভাগিনেয় ও ভাগিনেয়ীরাই পরিবার-স্থানে পরিগণিত। স্ত্রী, পুত্র, কন্যা প্রভৃতির সহিত তাঁহাদের কোন সংস্রব থাকে না। দয়াময় বিদ্যাসাগর মহাশয়, হতভাগিনীদের প্রতি অনুগ্রহ-প্রদৰ্শন-পূর্বক বন্দোবস্ত করিয়া দিয়া, কলিকাতা প্রস্থান করেন এবং যথাকালে অঙ্গীকৃত মাসিক দেয় প্রেরণ করিতে বিস্মৃত হন নাই। কতিপয় মাস অতীত হইলে পর, অগ্রজ মহাশয় বাটী আসিয়া, সেই দুই হতভাগিনীর বিষয়ে অনুসন্ধান করিয়া জানিলেন, চট্টোপাধ্যায় মহাশয় ও তাঁহার ভগিনীদ্বয় স্থির করিয়াছিলেন যে, বিদ্যাসাগরের অঙ্গীকৃত নূতন মাসহরা পুরাতন মাসিক মাসহরার অন্তর্ভূত হইয়াছে। আর তাহা কোন কারণে রহিত হইবার নহে। তদনুসারে তিনি ভগিনীদের উপদেশের অনুবর্ত্তী হইয়া, বৃদ্ধ স্ত্রী ও যুবতী দুহিতাকে বাটী হইতে বহিস্কৃত করিয়া দিয়াছেন; তাঁহারাও উপায়ান্তর-বিহীন হইয়া কলিকাতা প্রস্থান করিয়াছেন। ইহা শুনিয়া অগ্রজ মহাশয় যৎপরোনাস্তি দুঃখিত হইলেন। দাদার দুঃখ দেখিয়া, নবীন চক্রবর্ত্তী প্রভৃতি বলিলেন, “মহাশয়! গুরুমহাশয়ের কন্যার কথা শুনিয়া আপনি রোদন করিতে লাগিলেন, তবে আপনি দেশের কুলীনদের কোনও সন্ধান রাখেন নাই। কুলীনদের চরিত্র শুনিলে ঘৃণা ও রাগ হয়। মহাশয়! শুনিতে পাই, সাহেবেরা আপনার কথা শুনিয়া থাকেন। লেপ্টেনেণ্ট গবর্ণর সার সিসিল বীডনের সহিত আপনার বিলক্ষণ সম্ভাব আছে, তিনি আপনাকে সম্মান করিয়া থাকেন। অতএব আপনার নিকট আমাদের এই প্রার্থনা যে, আপনি যোগাড় করিয়া এই কুব্যবহারের মূলোৎপাটনে যত্ন করুন। কুলীনদিগের বহুবিবাহ কুপ্রথা উঠাইয়া দিবার জন্য যত্ন পাইলে, অনায়াসে দেশ-

১১