পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/১৭৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
১৭৩

বারে দেশে যাইবার ইচ্ছা পরিত্যাগ করিলেন। ঈশান এই কথা বলিয়াছে শুনিয়া, অগ্রজ মহাশয়, ঈশানের প্রতি অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হইলেন এবং পিতৃদেবকে বলিলেন, “আপনি গৃহস্থের মধ্যে থাকিয়া সময়াতিপাত করিতেন। এক্ষণে আপনাকে কদাচ একাকী কাশী যাইতে দিব না। বাটীর কেহ আপনার সমভিব্যাহারে না থাকিলে, নিজে বৃদ্ধ-বয়সে পাকাদি-কার্য্য সম্পন্ন করিয়া দিনপাত করা, আপনার পক্ষে অতি কষ্টকর হইবে।” পিতৃদেব কোনও উপদেশ না শুনিয়া, কাশীতে অবস্থিতি করাই স্থির করিলেন; সুতরাং কাশীধামে সুখস্বচ্ছন্দে অবস্থিতি করিবার বন্দোবস্ত হইল।

 যাইবার পূর্বে দাদা বলিলেন, “আপনি গেলে আমাদের মন অত্যন্ত ব্যাকুল হইবে। আমাদের অন্য কোনও চিত্ত-বিনোদনের উপায় নাই; অতএব আপনি সন্মতি প্রদান করিলে, চিত্রকর হাড়সন প্রাটের বাটী গিয়া, তাঁহার দ্বারা পটে আপনার প্রতিমূর্ত্তি অঙ্কিত করাইয়া লইব। অতএব আপনাকে আর পনর দিবস কলিকাতায় অবস্থিতি করিতে হইবে।” পিতৃদেব সম্মত হইলে, তাঁহার প্রতিমূর্ত্তি অঙ্কিত করাইলেন। ইহাতে তিন শত টাকা ব্যয় হয়। কিছুদিন পরে ঐ রূপ জননীদেবীরও প্রতিমূর্ত্তি অঙ্কিত করাইলেন; ইহাতেও তিন শত টাকা ব্যয় হয়। দাদা প্রত্যহ অন্ততঃ দুইবার ঐ মূর্ত্তি দর্শন করিতেন। কর্ম্মাটার ও ফরাশডাঙ্গার বাসাতেও স্বতন্ত্র প্রতিমূর্ত্তি প্রস্তুত করাইয়া রাখিয়াছিলেন।

 খৃঃ ১৮৫৯ সালের ১লা এপ্রেল, দেশহিতৈষী পরম-দয়ালু রাজা প্রতাপচন্দ্র সিংহ ও রাজা ঈশ্বরচন্দ্র সিংহ বাহাদুর, অগ্রজ মহাশয়ের পরামর্শে ও উদ্যোগে তাঁহাদের জন্মভূমি কান্দীগ্রামে ইংরাজী-সংস্কৃত স্কুল স্থাপন করেন। উক্ত রাজাদের জীবিতকাল পর্য্যন্ত অর্থাৎ ১৮৬৬ সাল পর্য্যন্ত ঐ স্কুল বিদ্যাসাগর মহাশয়ের তত্ত্বাবধানে ছিল। বিদ্যাসাগর মহাশয়ই শিক্ষকাদি নিযুক্ত করিতেন। রাজাদের টাকায় স্কুলের চেয়ার, ডেক্স, বেঞ্চ, আলমারি প্রভৃতি ক্রয় করিয়া পাঠাইয়াছিলেন ও বহুমূল্যবান্ পুস্তকাদি ক্রয় করিয়া, লাইব্রেরী করিয়া দিয়া-