পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

এই বৃত্তান্ত পিতামহী, মাতামহী ও পিতৃদেবের প্রমুখাৎ যেরূপ অবগত হইয়াছিলাম, তাহা অবিকল লিখিলাম।

 দাদার জন্মগ্রহণের পর অবধি পিতৃদেবের অবস্থার ক্রমশঃ উন্নতি হইতে লাগিল। পঞ্চমবৎসর বয়সের সময় দাদার বিদ্যারম্ভ হয়। তৎকালে বীরসিংহগ্রামের সনাতন বিশ্বাস পাঠশালার সরকার ছিলেন। সনাতন, ছোট ছোট বালকগণকে শিক্ষা দিবার সময় বিলক্ষণ প্রহার করিতেন, তজ্জন্য শিশুগণ সর্ব্বদা শঙ্কিত হইয়া পাঠশালায় যাইতে ইচ্ছা করিত না; একারণ পিতৃদেব, বীরসিংহনিবাসী কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়কে শিক্ষক মনোনীত করিলেন। কালীকান্ত, ভঙ্গকুলীন ছিলেন; সুতরাং বহুবিবাহ করিতে আলস্য করেন নাই। তিনি ভদ্রেশ্বরের নিকট গোরুটিগ্রামেই প্রায় অবস্থিতি করিতেন, অপরাপর শ্বশুরভবনেও টাকা আদায় করিবার জন্য মধ্যে মধ্যে পরিভ্রমণ করিতেন। পিতৃদেব, ভদ্রেশ্বর ও শ্রীরামপুর যাইয়া অনুসন্ধান দ্বারা জানিলেন যে, কালীকান্ত সর্ব্বদা গোরুটিতে থাকেন। তথায় যাইয়া তাঁহাকে অনেক উপদেশ দিয়া, সমভিব্যাহারে করিয়া বীরসিংহায় আনিলেন এবং কয়েক দিন পরে পাঠশালা স্থাপন করিয়া দিলেন। কালীকান্ত অত্যন্ত ভদ্রলোক ছিলেন। শিশুগণকে শিক্ষা দিবার বিশেষরূপ প্রণালী জানিতেন এবং শিশুগণকে আন্তরিক যত্ন ও স্নেহ করিতেন; একারণ, ছোট ছোট বালকগণ তাঁহার নিকট সর্ব্বদা অবস্থিতি করিতে ইচ্ছা করিত। এতদ্ভিন্ন তিনি সকলের সহিত সৌজন্য প্রকাশ করিতেন। স্থানীয় লোকগণ কালীকান্ত চট্টোপাধ্যায়কে আন্তরিক ভক্তি ও শ্রদ্ধা করিত, এবং সকলেই তাঁহাকে গুরুমহাশয় বলিত। কালীকান্তের নিকট অগ্রজ মহাশয় কিঞ্চিদ্ন‌ তিন বৎসর ক্রমাগত শিক্ষা করিয়া, বাঙ্গালা-ভাষা ও স্যাখতি অঙ্ক কষিতে শিখিলেন। ঐ সময়েই তাঁহার হস্তাক্ষর ভাল হইয়াছিল। এই সময়ে অগ্রজ মহাশয়, প্লীহা ও উদরাময়ে অত্যন্ত কষ্টভোগ করেন। বীরসিংহায় কোন প্রকারে আরোগ্য লাভ করিতে পারেন নাই; এজন্য;'জননীর মাতুল পাতুলনিবাসী রাধামোন