পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২০৯

সকলেরই প্রতি সমদৃষ্টি; ইহা জানিতে পারিয়া সকলেই চমৎকৃত হইলেন এবং পরম সন্তোষলাভ করিলেন। হেরিসন সাহেব, দাদাকে বলিলেন, “মাতার গুণেই আপনি এরূপ স্বভাবতঃ উন্নতমনা হইয়াছেন।” কথাবার্ত্তার শেষে সাহেব, জননীকে জিজ্ঞাসা করেন, “আপনার; কত টাকা আছে?” জননী উত্তর করেন, আমার টাকা নাই এবং টাকার আবশ্যকও নাই; যেরূপ ভাবে চলিয়া আসিতেছি, এইরূপ ভাবে চলিয়া পুত্রকন্যা রাথিয়া যাইতে পারিলে, আমার সকল অভিলাষ পূর্ণ হইবে।

 সন ১২৭৫ সালের চৈত্রমাসে এক দুর্ঘটনা হয়। বীরসিংহস্থ পৈত্রিক বসতবাটীর সমস্ত গৃহ নিশীথ-সময়ে অগ্নি লাগিয়া ভস্মীভূত হয়। শালগ্রাম ঠাকুরটি পর্যন্ত অগ্নির উত্তাপে দগ্ধ ও বিদীর্ণ হয়; মধ্যমাগ্রজ ও জননীদেবী প্রভৃতি নিদ্রিত ছিলেন। সৌভাগ্যক্রমে তাঁহারা সকলেই রক্ষা পাইয়াছিলেন। কিন্তু দ্রব্যাদি কিছুমাত্র বাহির করিতে পারা যায় নাই। অগ্রজ, এই সংবাদ পাইবামাত্র দেশে আগমন করেন। জননীদেৰীকে সমভিব্যাহারে করিয়া কলিকাতা লইয়া যাইবার জন্য যত্ন পাইলেন; কিন্তু তিনি বলিলেন, “আমি কলিকাতা যাইব না। কারণ, যে সকল দরিদ্র লোকের সন্তানগণ এখানে ভোজন করিয়া বীরসিংহা বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করে, আমি এস্থান পরিত্যাগ করিয়া স্থানান্তর প্রস্থান করিলে, তাহারা কি খাইয়া স্কুলে অধ্যয়ন করিবে? কে দরিদ্র বালকগণকে স্নেহ করিবে? বেলা দুই প্রহরের সময় যে সকল, বিদেশস্থ লোক ভোজন করিবার মানসে এখানে, সমাগত হন, কে তাঁহাদিগকে আদর-অভ্যর্থনাপূর্ব্বক ভোজন করাইবে? যে সকল কুটুম্ব আগমন, করিবেন, কে তাঁহাদিগকে যত্ন করিয়া ভোজন করাইবে?” জননী-দেবী, কলিকাতা যাইতে সম্মত হইলেন না; তজ্জন্য তাঁহার স্বতন্ত্র বন্দোবস্ত করেন। এস্থলে জননীদেবীর দয়াশীলুতার দুই এক কথা না লিখিয়া ক্ষান্ত থাকা যায় না। জননীদেবী, সর্ব্বদা গ্রামস্থ অভুক্ত লোককে ভোজন করাইতেন। স্থানীয় প্রতিবাষিগণ পীড়িত হইলে

১৪