পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

শয়ের গুরু-কন্যা বিন্ধ্যবাসিনী দেবী, স্বীয় কষ্টের কথা ব্যক্ত করিলে, অগ্রজ মহাশয় তাঁহার ক্লেশ-নিবারণের জন্য মাসিক ৪৲ টাকা মাসহরা বন্দোবস্ত করিয়া দেন। ইনি প্রায় দশ বৎসর মাসহরা পাইয়া কাশীলাভ করেন। ভারতচন্দ্র শিরোমণি মহাশয় ঐ সংবাদ পাইয়া, তিনিও ঐ অনাথ বৃদ্ধ গুরুকন্যাকে সাহায্য করিতেন। আমাদের দেশস্থ দীর্ঘগ্রামবাসী চট্টোপাধ্যায়দের বাটীর দুহিতা বিন্ধ্যবাসিনী দেবী, সম্ভ্রান্ত কুলীনস্বামী বর্ত্তমানেও অন্নবস্ত্র না পাইয়া, কাশীবাস করিয়া শ্রমসাধ্য কার্য্য করিয়া দিনপাত করিতেন। ক্রমশঃ বাৰ্দ্ধক্যনিবন্ধন কার্য্য করিতে অক্ষম হইয়া দাদাকে বলেন, “বাবা বিদ্যাসাগর! তোমার জননী আমাকে মাসে ২৲ টাকা করিয়া দিতেন, তাঁহার মৃত্যুর পর তোমার পিতা আমাকে আর দেন না; আমার বড়ই কষ্ট হইয়াছে।” অগ্রজ মহাশয় এই কথা শুনিয়া, মাসিক ৩৲ টাকা মাসহরা ব্যবস্থা করেন। ইনি দ্বাদশ বৎসর মাসহরা পাইয়া কাশী লাভ করেন।

 দাদার পরমবন্ধু পরমধার্ম্মিক বাবু অমৃতলাল মিত্র মহাশয়, পীড়া নিবন্ধন শেষাবস্থায় কাশীবাস করেন। ইনি দেশহিতৈষী ও বিদ্যোৎসাহী লোক ছিলেন। ইনি কাশীবাস করিয়াও সর্ব্বদা লোকের হিতাকাঙ্ক্ষায় ব্যাপৃত ছিলেন। ইনি প্রাচীন দুস্তপ্রাপ্য পুস্তক সকল সংগ্রহ করিয়া, কলিকাতায় প্রেরণ করিতেন। পূর্ব্বে যৎকালে দাদা কলিকাতায় রাজকার্য্যে নিযুক্ত ছিলেন, তৎকালে কলিকাতা সভাবাজারস্থ রাজবাটীতে যাইয়া, বাবু অমৃতলাল, বাৰু আনন্দকৃষ্ণ ও শ্রীনাথ বাবুর সহিত পরামর্শ করিতেন; কাশীতেও অমৃতবাবুর সহিত পরামর্শ করিতেন। উক্ত মহাশয়ের অনুরোধে, তাঁহার অনুগত শ্রীযুক্ত তারাকান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়কে মাসিক ৪৲ টাকা, আর বাপুদেব শাস্ত্রীকে মাসিক ২৲ টাকা মাসহরা প্রদান করিতেন।

 পিতৃদেবের কেদারঘাটের আত্মীয় অশীতিবর্ষীয় রাধানাথ চক্রবর্ত্তীকে অগ্রজ মহাশয়, মাসিক ৩৲ টাকা মাসহরার বন্দোবস্ত করেন। কয়েক বৎসর যথাসময়ে টাকা পাইয়া, কিছু দিন হইল ইনি কাশীলাভ করিয়াছেন।