পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা।
২৩৩

বলিলেন, “তুমি একাই কি এ কার্য্য নিম্পন্ন করিবে? আমি কি কেহ নই?” এই বলিয়া দাদা, ঐ সকল ব্রাহ্মণদের পা ধোয়াইয়া দিতে লাগিলেন। ঐ সকল ব্রাহ্মণদের মধ্যে দুই চারি জনের পায়ে ঘা থাকাপ্রযুক্ত তাহাতে পূয নিৰ্গত হইতেছিল; তাহা দেখিয়াও তিনি কিছুমাত্র ঘৃণাবোধ করেন নাই। অপরাপর দর্শকগণ দেখিয়া আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া বলিয়াছিলেন, এরূপ মাতৃভক্তি অপর কোন সম্ভ্রান্ত লোকের দৃষ্ট হয় না।

 কলিকাতানিবাসী বাবু শিবকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জালিয়াতী অপরাধে অভিযুক্ত হইয়া দোষী সাব্যস্ত হন। সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সারা মর্ভাণ্ট ওরেন্স, তাঁহার প্রতি দ্বীপান্তর-প্রেরণ দণ্ডাজ্ঞাপ্রদানসময়ে যাবতীয় বঙ্গবাসীদিগকে জালিয়াৎ, মিথ্যাসাক্ষীদাতা প্রভৃতি বলিয়া দোষারোপ করেন ও নানা কটুবাক্য প্রয়োগ করেন। তাহাতে অগ্রজ মহাশয়, কলিকাতাবাসী ন্যূনাধিক পঞ্চসহস্ৰ সম্ভ্রান্ত কৃতবিদ্য ভদ্রলোকদিগকে একযোগ করিয়া, সার্ রাজা রাধাকান্তদেবের বাটীতে বসিয়া, স্থিরভাবে কথাবার্ত্তার পর কার্য্যশেষ করিয়া, সকলের সহ একযোগে দরখাস্ত লিখিয়া স্বাক্ষর করিলেন ও করাইলেন, এবং ঐ দরখাস্ত গবর্ণর জেনেরলের মারফতে বিলাতে ষ্টেট-সেক্রেটারির নিকট পাঠান। ঐ দরখাস্ত অনুসারে ষ্টেট-সেক্রেটারি, গবর্ণর জেনেরলকে লিখেন যে, আপনি সার্ মর্ভাণ্ট ওরেন্সকে সাবধান করিয়া দিবেন, অতঃপর যেন এরূপ অন্যায় কার্য্য আর না করেন। বঙ্গদেশে দাদাই একযোগের পথপ্রদর্শক হন।

 ঐ সময় কলিকাতা সংস্কৃত-কলেজের প্রফেসার পণ্ডিত দ্বারকানাথ বিদ্যাভূষণ মহাশয়, বায়ু পরিবর্ত্তন-মানসে কাশীধামে আগমন করিয়াছিলেন। দাদার সহিত তাঁহার বিশেষ আত্মীয়তা দেখিয়া, বাঙ্গালী-দল-সংক্রান্ত ব্রাহ্মণেরা তাঁহাকে অনুরোধ করেন যে, বিদ্যাসাগরের সহিত আমাদের মনান্তর হইয়াছিল, তাহা আপনি মধ্যস্থ হইয়া মীমাংসা করিয়া দেন। দলস্থ বাঙ্গালী ব্রাহ্মণদের অনুরোধে তিনি দাদাকে বলেন, “কাশীবাসী দলস্থ ব্রাহ্মণদের সহিত