পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/২৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বাধীনাবস্থা
২৫১

নারায়ণচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায় বীরসিংহায় গিয়া, গ্রামস্থ সমুদায় স্ত্রীপুরুষদিগকে ও নিকটবর্ত্তী জমিদার ও সম্ভ্রান্ত ভদ্রলোকদিগকে নিমন্ত্রণ করিয়া, রীতিমত সম্বৰ্দ্ধনা করিয়াছিলেন। ইহাতে যথেষ্ট ব্যয় হইয়াছিল।

 দাদার পরমবন্ধু ডাক্তার দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়, তাঁহার দ্বিতীয় পুত্র বাবু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়কে সিবিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য বিলাতে পাঠান। তথায় অবস্থিতি করিয়া সুরেন্দ্র বাবু, সিবিল সাভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অধিক বয়স বলিয়া আপত্তি উত্থাপিত হইলে ও বিলাত হইতে সংবাদ আসিলে, বাবু দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় আসিয়া, দাদাকে গোলযোগের কথা বলিলেন। ইহা শুনিয়া তিনি অনারেবল বাবু দ্বারকানাথ মিত্র ও শ্রীযুক্ত বাবু রাজেন্দ্র দত্ত মহাশয় প্রভৃতির সহিত পরামর্শ করিয়া, বিলাতে কোষ্ঠী প্রভৃতি কাগজপত্র প্রেরণ করিয়া আপত্তি খণ্ডন করিলেন; সুরেন্দ্র বাবু সিবিলিয়ান হইলেন। বঙ্গে আগমনপূর্বক কার্য্যে প্রবিষ্ট হইলে, উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদিগের সহিত তাঁহার মিল না হওয়াতে, সুরেন্দ্রবাবু পদচ্যুত হন। পদচ্যুত হইবার পরে সুরেন্দ্রবাবু মেট্রোপলিটানে প্রফেসর নিযুক্ত হন।

 এক দিবস দাদা সুখাসীন হইয়া কথাবার্তা কহিতেছেন, এমন সময়ে দুই জন ধর্ম্ম-প্রচারক ও কয়েকজন কৃতবিদ্য ভদ্রলোক আসিয়া উপবেশনপূর্বক জিজ্ঞাসা করিলেন, “বিদ্যাসাগর মহাশয়! ধর্ম্ম লইয়া বঙ্গদেশে বড় হুলস্থূল পড়িয়াছে, যাহার যা ইচ্ছা সে তাহাই বলিতেছে, এ বিষয়ের কিছুই ঠিকানা নাই; আপনি ভিন্ন এ বিষয়ের মীমাংসা হইবার সম্ভাবনা নাই।” এই কথায় দাদা বলিলেন, “ধর্ম্ম যে কি, তাহা মনুষ্যের বর্তমান অবস্থায় জ্ঞানের অতীত এবং ইহা জানিবারও কোন প্রয়োজন নাই।” ইহা শুনিয়া তাঁহারা আরও পীড়াপীড়ি করিলে, তিনি বলিলেন, “আমি পরের জন্য বেত খাইতে পারিব না”; এই বলিয়া গল্প আরম্ভ করিলেন।

 “এক দিবস মৃত্যুরাজ, কর্ম্মচারিগণসহ কাছারি খুলিয়া কার্য্যে প্রবৃত্ত হইলে; প্রহরী এক ব্যক্তিকে ধৃত করিয়া আনিলে, মৃত্যুরাজ তাহাকে বলিলেন,