পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৩৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চরিত।
৩৩

মহাশয়ের সন্ধ্যাভ্যাস আছে; কিন্তু সন্ধ্যা সমস্তই বিস্মৃত হইয়াছিলেন। সন্দেহপ্রযুক্ত একদিবস কালিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় পিতৃব্য মহাশয় তাহাকে বলিলেন, “আমরা সন্ধ্যা ভুলিয়া গিয়াছি, বিশেষতঃ আমরা বিষয়ী লোক, তুমি সংস্কৃত অধ্যয়ন করিয়াছ, তোমার শুদ্ধ হইবে, অতএব একবার সন্ধ্যাটি তুমি আবৃত্তি কর, আমি শুনিতে ইচ্ছা করি।” তিনি সন্ধা ভুলিয়া গিয়া, ছিলেন, কিছুই বলিতে পারিলেন না। পিতৃব্য, পিতৃদেবকে বলিলেন যে, “ঈশ্বর সন্ধ্যা সমস্ত ভুলিয়া গিয়াছে; মিথ্যা কেবল হাতনাড়াদি কার্য্য করিয়া থাকে।” পিতৃদেব তাহা শুনিয়া বিলক্ষণ প্রহার করেন। সন্ধ্যা শিক্ষা না হইলে জল খাইতে দিব না বলায়, অগ্রজ মহাশয় সন্ধ্যার পুঁথি দেখিয়া পুনর্ব্বা‌র সন্ধ্যা মুখস্থ করেন।

 বীরসিংহ হইতে জননীদেবী চরখায় সুতা কাটিয়া, উভয় পুত্রের জন্য বস্ত্র প্রস্তুত করিয়া কলিকাতায় পাঠাইতেন। উভয় ভ্রাতা সেই মোটা বস্ত্র পরিয়া, অধ্যয়নার্থ পটলডাঙ্গার কলেজে যাইতেন। এক্ষণে সেইরূপ চরখাকাটা সুতায় প্রস্তুত মোটা বস্ত্র উড়িষ্যাদেশীয় বেহার বা জঙ্গলবাসী ধাঙ্গড়গণকে পরিধান করিতে দেখা যায়। অগ্রজ মহাশয়কে বরাবর মোটা বস্ত্র পরিধান করিতে দেখা গিয়াছে, তিনি কখনই সূক্ষ্ম বস্ত্র পরিধান করেন নাই। অগ্রজ মহাশয়, কলেজে মাসিক বৃত্তি যাহা পাইতেন, তাহা পিতাকে দিতেন।

 এইরূপে তাঁহার উন্নতি হওয়াতে পিতৃদেব বলেন যে, “তোমার এই টাকায় জমি ক্রয় করিব; কলেজের অধ্যয়ন শেষ হইলে, দেশে টোল করিয়া দিব। দেশস্থ লোক যাহাতে লেখাপড়া শিক্ষা করিতে পারে, তাহা তুমি করবে। তোমার বৃত্তির টাকায় যে জমি ক্রয় করা হইবে, তাহার উপস্বত্বের দ্বারা বিদেশীয় ছাত্রগণের ব্যয়নির্ব্বা‌হের কিছু সাহায্য হইতে পরিবে।” ইহা স্থির করিয়া, কাঁচিয়া গ্রাম প্রভৃতিতে কয়েক বিঘা জমি ক্রয় করিয়াছিলেন। কিছু দিন পরে বলেন, “তোমার টাকায় তোমার আবশ্যক পুস্তকাদি ক্রয়