পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিদ্যালয়চরিত।
8৯

তজ্জ‌ন্য দৈবশক্তিবলে সমস্ত শাস্ত্রে পারদর্শী হইয়াছে।” কোন কোন পণ্ডিত বলিতেন যে, “ঈশ্বরের মাতামহ শবসাধন করেন, তাঁহারই আশীর্ব্বাদ-প্রভাবে এত অল্প বয়সে এরূপ পণ্ডিত হইয়াছে।”

 যৎকালে অগ্রজ, ন্যায়শাস্ত্রের শ্রেণীতে অধ্যয়ন করেন, তৎকালে ব্যাকরণের দ্বিতীয় শ্রেণীর অধ্যাপক হরিপ্রসাদ তর্কপঞ্চানন পীড়িত হইয়াছিলেন। কলেজের অধ্যক্ষ মহাশয়, অগ্রজকে উপযুক্ত পণ্ডিত বিবেচনা করিয়া, দুই মাসের জন্য প্রতিনিধিপদে নিযুক্ত করেন। তিনি প্রতিনিধি পদে নিযুক্ত থাকিয়া ৪০৲ টাকা প্রাপ্ত হন, এবং সেই টাকা পিতৃদেবের হস্তে অৰ্পণ করিয়া বলেন, “এই টাকায় পিতৃকৃত্য-সম্পাদনার্থ গয়াধাম প্রভৃতি তীর্থ-পর্যটনে যাত্রা করুন।” ছেলেমানুষ, পিতাকে তীর্থক্ষেত্রে যাইতে উপদেশ দিতেছেন, এই কথায় আত্মীয় বন্ধুবান্ধব সকলেই পরম আহ্লা‌দিত হইলেন।

 পিতৃদেব তৎকালে কলিকাতা যোড়াশাঁকোনিবাসী বাবু রামসুন্দর মল্লিকের আফিসে চাকরি করিতেন। রামসুন্দর মল্লিক যদিও অতি ধার্ম্মিক লোক ছিলেন, তথাপি তিনি পিতৃদেবকে ঐ সময় তীর্থ পর্য্যটনে যাইতে নিষেধ করেন; সেই জন্য পিতা, তাঁহার অবাধ্য হইয়া যাইতে সাহস করেন নাই। এজন্য দাদা, বাবু রামসুন্দর মল্লিকের বাটীতে যাইয়া, যাহাতে পিতা গয়া যাইতে পারেন, রামসুন্দর বাবুকে এরূপ ধর্ম্মবিষয়ক উপদেশ প্রদান করেন। বৃদ্ধ রামসুন্দর বাবু, ছেলেমানুষের প্রমুখাৎ নানাপ্রকার হিতগর্ভ উপদেশ শুনিয়া পরম আহ্লা‌দিত হইলেন, এবং পিতৃদেবের গয়াযাত্রার বিষয়ে আর নিবারণ করিতে পারিলেন না। তখন রেলের পথ হয় নাই; তজ্জন্য পিতৃদেব পদব্রজেই প্রস্থান করেন।

 ঐ সময় মার্শেল সাহেব, সংস্কৃত-কলেজের সেক্রেটারির পদ পরিত্যাগ করিলেন। ঐ পদে কলিকাতার ছোট আদালতের জজ বাবু রসময় দত্ত মহাশয় নিযুক্ত হইলেন। তৎকালে বাঙ্গালীর মধ্যে ইহাঁর তুল্য আর কাহারও অধিক বেতন ছিল না। দত্তবাবু যদিও সংস্কৃত-ভাষায় অনভিজ্ঞ, তথাপি