পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৬
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

জন পিতৃব্যপুত্র, দুই জন পিতৃস্বস্রেয়, এক জন মাতৃস্বশ্রেয় ও পৈত্রিক অনুগত ভূত্য শ্রীরাম নাপিত, এই নয় জন অবস্থিতি করিতাম। বাসায় পাচক-ব্রাহ্মণ ছিল না, সকলকেই পর্য্যায়ক্রমে পাকাদিকার্য্য সম্পন্ন করিতে হইত। অগ্রজও পর্য্যায়ক্রমে পাকাদিকার্য্য নির্ব্বা‌হ করিতেন। যে বাটীতে বাসা ছিল, তাহাতে সকলের স্থান সংকুলান না হওয়ায়, বাবু রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়দের পঞ্চাননতলাস্থ বৈঠকখানা-বাটীতে বাসা হইল।

 ঐ বৎসর ভাদ্রমাসে মার্শেল সাহেব, সংস্কৃত-কলেজের জুনিয়র ও সিনিয়র ডিপার্টমেণ্টের এস্‌কলার্শি‌পের পরীক্ষক নিযুক্ত হন। এই বৎসর হইতে এই নূতন পরীক্ষায় এডুকেশন কোউন্‌সেল হইতে নূতন প্রথার আদেশ হয়। সাহেব, স্বয়ং ভালরূপ সংস্কৃত জানিতেন না; সুতরাং তাঁহার পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্রকেই সমস্ত প্রশ্ন প্রস্তুত করিতে হইত। কাব্য ও অলঙ্কারের ক্লাস জুনিয়র ছিল; ঐ দুই ক্লাসের জন্য কাব্য, বাঙ্গালা হইতে সংস্কৃত ও সংস্কৃত হইতে বাঙ্গালা অনুবাদ, ব্যাকরণ ও লীলাবতীর প্রশ্ন প্রস্তুত করিতেন। সিনিয়ার ক্লাসের জন্য দর্শন, বেদান্ত, স্মৃতি, সংস্কৃত গদ্য ও পদ্য রচনা, বীজগণিতের অঙ্ক প্রভৃতির প্রশ্ন প্রস্তুত করিয়া, গোপনে মুদ্রিত করাইতেন; তদ্ভিন্ন কোন কোন বিষয়ের প্রশ্ন স্বহস্তেও লিখিয়া দিতেন। পরীক্ষার কার্য্যপ্রণালী দেখিয়া, সকলেই মার্শেল সাহেব ও অগ্রজের ভূয়সী প্রশংসা করিয়াছিলেন। ইহার পূর্ব্ব‌বৎসর উপযুক্ত পরীক্ষকের অভাবে সকলই অসঙ্গত প্রশ্ন হইয়াছিল; তজ্জন্য কোন ছাত্রই এস্‌কলার্শি‌প প্রাপ্ত হন নাই।

 ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে নিযুক্ত হইবার পর, ইংরাজী-ভাষায় কৃতবিদ্য অনেক লোক অর্থাৎ বাবু শ্যামাচরণ সরকার, বাবু রামরতন মুখোপাধ্যায় প্রভৃতি অগ্রজের নিকট সংস্কৃত অধ্যয়ন-মানসে বাসায় আসিতেন। তৎকালে উপক্রমণিকা ব্যাকরণের সৃষ্টি হয় নাই। সংস্কৃত-ভাষা শিখিতে হইলে, অগ্রে মুগ্ধবোধ বা অন্য কোন ব্যাকরণ পড়িতে হইত; সুতরাং অগ্রেই মুগ্ধবোধ