পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৬২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৫৮
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

অক্ষয়বাবুর অন্যান্য কয়েকখানি পুস্তকও তিনি দেখিয়া দিয়াছিলেন। অগ্রজ মহাশয়, সর্ব্বা‌গ্রে তত্ত্ববোধিনীতে মহাভারতের বাঙ্গালা অনুবাদ প্রকাশ করেন। তৎকালে তত্ত্ববোধিনীর সভ্যগণের অনুরোধবশবর্ত্তী হইয়া, তিনি তথাকার তত্ত্বাবধায়ক হইয়াছিলেন। কিন্তু কিছু দিন পরেই কোন বিশেষ কারণে, তত্ত্ববোধিনীর সংস্রব একবারে পরিত্যাগ করেন।

 আমাদের তৎকালীন বাসার সম্মুখে ঁহৃদয়রাম বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাটী ছিল। ইহাঁর পৌত্র বাবু রাজকৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয় হিন্দু কলেজে অধ্যয়ন করিতেন। তিনি অল্পবয়সেই ইংরাজী পড়া পরিত্যাগপূর্ব্ব‌ক নিরর্থক বাটীতে বসিয়া থাকিতেন। তিনি নিত্য‌ই দেখিতেন যে, অনেকে ইংরাজী শিক্ষা করিয়া, বিষয়-কর্ম্মে লিপ্ত থাকিয়াও, অগ্রজের নিকট সংস্কৃত শিক্ষা করিতেছেন; এজন্য তিনিও, তাঁহার নিকট মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ শিক্ষা করিতে প্রবৃত্ত হন। ইতিপূর্ব্বে‌ রাজকৃষ্ণ বাবু কিছুমাত্র ব্যাকরণ অবগত ছিলেন না। তিনি দিবারাত্র পরিশ্রম-সহকারে অগ্রজের নিকট অধ্যয়ন করিয়া, ছয় মাসের মধ্যে মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ সমাপ্ত করেন। এজন্য সংস্কৃত-কলেজের পণ্ডিত ও ছাত্রগণ আশ্চর্য্যান্বিত হইয়া বলিয়াছিলেন যে, ঈশ্বর কি প্রণালী অবলম্বন করিয়া, এত শীঘ্র ব্যাকরণ সমাপ্ত করাইলেন। পণ্ডিত গিরিশচন্দ্র বিদ্যারত্ন, কলেজের অধ্যয়ন সমাপ্ত করিয়া চাকরী না হওয়া প্রযুক্ত, অগ্রজ মহাশয়ের বাসায় মধ্যে মধ্যে অবস্থিতি করিতেন। দাদাও তাঁহাকে সহোদরের ন্যায় স্নেহ করিতেন। ঐ সময়ে ফোর্ট উইলিয়ম কলেজে সিবিল পড়াইবার জন্য ৪০৲ টাকা বেতনের একটী পণ্ডিতের পদ শূন্য হইলে, অগ্রজ মহাশয় মার্শেল সাহেবকে বলিয়া, তাঁহার বাল্যকালের পরমবন্ধু মদনমোহন তর্কালঙ্কারকে নিযুক্ত করিয়া দেন। ইতিপূর্ব্বে‌ মদনমোহন তর্কালঙ্কার, কলিকাতায় বাঙ্গালা পাঠশালায় মাসিক ১৫৲ টাকা বেতনের শিক্ষকতা-কার্য্যে নিযুক্ত ছিলেন; তৎপরে বারাসতে মাসিক ২০৲ টাকা বেতনের কর্ম্ম করিতেন। ইহার কিছু দিন পরে মাদ্‌রাসা কলেজের ৪০৲ টাকা বেতনের একটী পণ্ডিতের পদ শূন্য