পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬০
বিদ্যাসাগর-জীবনচরিত।

 সংস্কৃত-কলেজের ব্যাকরণের তৃতীয় শ্রেণীর অধ্যাপক গঙ্গাধর তর্কবাগীশ মহাশয়, তাঁহার পুত্র গোবিন্দচন্দ্র শিরোমণি অপেক্ষা অগ্রজ মহাশয়কে ভাল বাসিতেন। যখন যাহা আবশ্যক হইত, তিনি তাহা দাদাকেই বলিতেন। দাদা শ্রবণমাত্রেই তাঁহার আজ্ঞানুবর্ত্তী হইয়া, সে কার্য্য সম্পন্ন করিতেন। অনুমান ইং ১৮৪৩ সালে জ্যৈষ্ঠমাসের শেষে, গঙ্গাধর তর্কবাগীশ মহাশয় বিষম বিসূচিকারোগাক্রান্ত হইলেন এবং অবিলম্বে তাঁহার শৌচ-প্রস্রাব বন্ধ হইয়া অত্যন্ত যাতনা হইতে লাগিল। অগত্যা তাঁহার প্রিয়ছাত্র ঈশ্বরচন্দ্রকে আহ্বা‌ন করিলেন। দাদা, শ্রবণমাত্রই অত্যন্ত বিষন্নবদনে দ্রুতবেগে তৎকালীয় বিখ্যাত ডাক্তার বাবু নবীনচন্দ্র মিত্র ও তালতলানিবাসী ডাক্তার বাবু, দুর্গাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় মহাশয়দের বাটী যাইয়া, তাঁহাদিগকে সমভিব্যাহারে লইয়া, তর্কবাগীশ মহাশয়ের বাটীতে গমন করিলেন। তিন দিবস অনন্যকর্ম্মা ও অনন্যমনা হইয়া, তিনি পীড়িত পণ্ডিতের চিকিৎসা করাইলেন। তাহাতে তর্কবাগীশ প্রথমতঃ আরোগ্যলাভ করেন, কিন্তু পরে হঠাৎ এক দিবস তাঁহার প্রাণত্যাগ হয়। কয়েক দিবস অগ্রজ মহাশয় স্বহস্তে তাঁহার মলমূত্রাদি পরিষ্কার করেন। চিকিৎসকগণ, কয়েক দিবসের ভিজিটের টাকা পর্যন্ত গ্রহণ করেন নাই। উক্ত কয়েক দিবসের ঔষধের মূল্যও অগ্রজ মহাশয় স্বয়ং প্রদান করিয়াছিলেন। বাল্যকালের শিক্ষকের প্রতি তাঁহার এরূপ শ্রদ্ধা ও ভক্তি দেখিয়া, সংস্কৃত-কলেজের অধ্যাপক ও ছাত্রগণ তাঁহার যথেষ্ট প্রশংসা করিতে লাগিলেন এবং সকলে একবাক্যে বলিলেন যে, “তর্কবাগীশের পুত্র ও কন্যা এ সময়ে নিকটে উপস্থিত নাই; অনেক ছাত্র বিদ্যমান রহিয়াছে বটে, কিন্তু কেহই ঈশ্বরের মত ভক্তিপূর্ব্ব‌ক স্বহস্তে বিষ্ঠা পরিষ্কার করিতে পারে নাই।” অতঃপর অপর যে কোন আত্মীয় বন্ধুর পীড়া হইত, তিনি বিনা ভিজিটে ডাক্তার পাইবার জন্য অগ্রজকে জানাইতেন। তিনিও কি আত্মীয় কি অনাত্মীয় কাহারও পীড়ার সংবাদ পাইলে, ডাক্তার দুর্গাচরণ বাবুকে লইয়া, সেই রোগীর ভবনে যাইতেন। যে রোগীর কোন অভিভাবক নাই জানিতে