পাতা:বিদ্যাসাগর জীবনচরিত - শম্ভুচন্দ্র বিদ্যারত্ন.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চাকরি।
৭৯

বিক্রয় বা মুদীর দোকান করিয়া জীবিকা-নির্বাহ করিব।” এরূপ সন্মানের কার্য্য অক্লেশে পরিত্যাগ করায়, অনেকে আশ্চর্য্যান্বিত হইলেন। কেহ কেহ বলিলেন যে, বিদ্যাসাগরের মতিভ্রম হইয়াছে, নচেৎ এরূপ সম্মানের পদ পরিত্যাগ করেন কেন? কিন্তু কর্ম্ম ত্যাগ করিয়া অগ্রজের কিছুমাত্র মানসিক কষ্ট হইল না। তৎকালে বাসায় নিরুপায় আত্মীয় ও স্বসম্পৰ্কীয় প্রায় ২০টী বালককে অন্নবস্ত্র দিয়া বিদ্যালয়ে অধ্যয়ন করাইতেছিলেন। তন্মধ্যে কাহাকেও বাসা হইতে যাইবার কথা এক দিনের জন্যও বলেন নাই। বাল্যকাল হইতে অগ্রজ মহাশয় পরম দয়ালু ছিলেন। কিসে পরের উপকার হইবে, সতত এই চিন্তাতেই মগ্ন থাকিতেন। ভালরূপ ইংরাজী-ভাষা শিক্ষার জন্য, প্রত্যহ প্রাতে বহুবাজারের পঞ্চাননতলার বাসা হইতে, সভাবাজারস্থ রাজা রাধাকান্ত দেবের বাটীতে, রাজার জামাতা বাবু অমৃতলাল মিত্র ও অপর জামাতা বাবু শ্রীনাথচন্দ্র বসুর নিকট যাইতেন এবং আগ্রহাতিশয়-সহকারে ইংরাজী-ভাষার অনুশীলনে প্রবৃত্ত ছিলেন। মধ্যম সহোদর, ফোটউইলিয়ম কলেজের প্রধান পদে নিযুক্ত থাকিয়া মাসিক যে ৫০৲ টাকা বেতন পাইতেন, তদ্দ্বরা কলিকাতার বাসাখরচ অতিকষ্টে নির্ব্বাহ হইতে লাগিল। অগ্রজ মহাশয়, দেশস্থ বাটীর মাসিক ব্যয়-নির্ব্বাহের জন্য মাসে মাসে ৫০৲ টাকা ঋণ করিয়া প্রেরণ করিতে লাগিলেন।

 ১৯০৩ সংবতে, হিন্দী বেতালপঞ্চবিংশতির বাঙ্গালা অনুবাদ প্রকাশিত করিলেন। ফোটউইলিয়ম কলেজের কর্ম্মাধ্যক্ষ, সিবিলিয়ানদের পাঠের উদ্দেশে, একশত বেতালপঞ্চবিংশতি তথাকার লাইব্রেরীতে রাখিলেন; গবর্ণমেণ্ট উহার মূল্য ৩০০৲ টাকা প্রদান করিলেন। এতদ্বারা ছাপাময় ব্যয় নির্ব্বহ হইল। অবশিষ্ট চারিশত পুস্তকের মধ্যে প্রায় দুই শত পুস্তক আত্মীয় ও বন্ধুবান্ধবকে বিনামূল্যে বিতরণ করিলেন। বেতালপঞ্চবিংশতি মুদ্রিত হইবার পূর্ব্বে, অপর আর কেহ কখন এরূপ উৎকৃষ্ট বাঙ্গালাভাষায় পুস্তক লিখিতে পারেন নাই। এজন্য দেশবিদেশে অগ্রজ মহাশয়ের প্রশংসা