পাতা:বিবিধ সমালোচন (বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়).pdf/৬৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ সমালোচন।
৫৫

শিক্ষাদাতা—কিন্তু নীতিনির্ব্বাচনের দ্বারা তাঁহারা শিক্ষা দেন না। কথাচ্ছলেও নীতিশিক্ষা না। তাঁহারা সৌন্দর্য্যের চরমোৎকর্ষ সৃজনের দ্বারা জগতের চিত্তশুদ্ধি বিধান করেন। এই সৌন্দর্য্যের চরমোৎকর্ষের সৃষ্টি কাব্যের মুখ্য উদ্দেশ্য। প্রথমোক্তটি গৌণ উদ্দেশ্য, শেষোক্তটি মুখ্য উদ্দেশ্য।

 কথাটা পরিষ্কার হইল না। যদিও উত্তরচরিত সমালোচন পক্ষে এ কথা আর অধিক পরিষ্কার করিবার প্রয়োজন নাই, তথাপি প্রস্তাবের গৌরবানুরোধে আমরা তাহাতে প্রবৃত্ত হইगाম।

 চোর চুরি করে। রাজা তাহাকে বলিলেন, “তুমি চুরি করিও না; আমি তাহা হইলে তোমাকে অবরুদ্ধ করিব।” চোর ভয়ে প্রকাশ্য চুরি হইতে নিবৃত্ত হইল, কিন্তু তাহার চিত্তশুদ্ধি জন্মিল না। সে যখনই বুঝিবে, চুরি করিলে রাজা জানিতে পরিবেন না, তখনই চুরি করিবে।

 তাহাকে ধর্ম্মোপদেশক বলিলেন, “তুমি চুরি করিও না—চুরি ঈশ্বরাজ্ঞাবিরুদ্ধ।” চোর বলিল, “তাহা হইতে পারে, কিন্তু ঈশ্বর যখন আমার আহারের অপ্রতুল করিয়াছেন, তখন আমি চুরি করিয়াই খাইব।” ধর্ম্মোপদেশক বলিলেন, “তুমি চুরি করিলে নরকে যাইবে।” চোর বলিল, “তদ্বিষয়ে প্রমাণাভাব।”

 নীতিবেত্তা কহিতেছেন, “তুমি চুরি করিও না, কেননা চুরিতে সকল লোকের অনিষ্ট, যাহাতে সকল লোকের অনিষ্ট, তাহা কাহারও কর্ত্তব্য নহে।” চোর বলিবে, “যদি সকল লোক আমার জন্য ভাবিত, আমি তাহা হইলে সকলের জন্য ভাবিতে পারিতাম। লোকে আমার খেতে দিক্‌, আমি চুরি