পাতা:বিভূতি রচনাবলী (চতুর্থ খণ্ড).djvu/১১৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

দৃষ্টি-প্রদীপ ed জ্যাঠা আবার তাই আপনাকে গিয়েছে বলতে—উদ্ধব-জ্যাঠার যা কাণ্ড । 鬱 বৈষ্ণব-ধর্মের আবহাওয়ায় মানুষ হয়েছে বটে, কিন্তু ও নিজে যেন কিছুই মানে না-এই ভাবের। কখনও কোনও পূজা-অৰ্চনা ওকে করতে দেখি নি, এক ওর বাবার বিষ্ণুমন্দিরে প্রদীপ দেখানো ছাড়া। আখড়ায় প্রতিষ্ঠিত বিগ্রহের পূজার যোগাড় করে উদ্ধব নিজে, মালতীকে সেদিকে বড় একটা ঘোষতে দেখি নি। তা বলে ওর মন ওর বাপের মত সংস্কারমুক্তও নয় । ছোটখাটো বাছ-বিচার এত মানে যে, আখড়ার লোকে অতিষ্ঠ । সন্ধ্যাবেলা ঝিঙে তুলেছিল বলে একটি বাবাজীকে মালতীর কাছে কড়া কথা শুনতে হয়েছিল । ছোয়াছুরির বালাই বড়-একটা নেই—মুচির ছেলেকেও ঘরের দাওয়ায় বসিয়ে থাওয়াচ্ছে, কাওড়া পাড়ায় অমুখ হলে সাবু ক’রে নিয়ে গিয়ে নিজের হাতে খাইয়ে আসতে দেখেছি। • একদিন বিকেলে আখড়ার সামনে মাঠে পাঠশালা করছি, মালতী এসে বললে—দিন আজ ওদের ছুটি । আসুন একটা জিনিস দেখিয়ে আনি । আখড়ার পাশে ছোট একটা মাঠ পেরিয়ে একটা রাঙা মাটির টিলা । তার ওপর শালপলাশের বন — টিলার নীচে ঘন বনসিদ্ধির জঙ্গল । টিলার ওপারে পলাশবনের আড়ালে একটা ছোট মন্দির। মালতী বললে—এই দেখাতে আনলাম আপনাকে নন্দিকেশ্বর শিবের মন্দির— বড় জাগ্রত ঠাকুর—খৃষ্টান হ’লেও মাথাটা নোয়ান—দোষ হবে না। মন্দিরের পূজারী দু’খানা বাতাসা দিয়ে আমাদের জল দিলে। সে উড়িয়ার ব্রাহ্মণ, উপাধি মহান্তি, বহুকাল এদেশে আছে, বাংলা জানে ভাল। মালতীকে ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছে । তারপর আমরা তিনজনেই মন্দিরের পশ্চিম দিকের রোয়াকে বসলুম। মালতী বললে— মহান্তি কাক, বলুন তো এই মন্দির-প্রতিষ্ঠার কথাটা একে। ইনি আবার খৃষ্টান কিনা, ওসব মানেন না । আমি বললুম—আ, কেন বাজে বকছ মালতী ? কি মানি না-মানি—মানে প্রত্যেক মামুষের— মালতী আমার কথাটা শেষ করতে দিলে না। বললে—আপনার বক্তৃতা রাখুন। শুমুন, এটা খুব আশ্চৰ্য্য কথা—বলুন তো মহান্তি-কাক ? মহান্তি বললে—এইখানে আগে গোয়ালাদের বাগান ছিল, বছর-পঞ্চাশ আগেকার কথা । রোজ তাদের দুধ চুরি যেত। দু-তিনটে গরু সকালে একদম দুধ দিত না । একদিন তারা রাত জেগে রইল। গভীর নিযুতি রাতে দেখে টিলার নীচের ওই বনসিদ্ধির জঙ্গল থেকে কে এক ছোকরা বার হয়ে গরুর বাটে মুখ দিয়ে দুধ খাচ্ছে। যে-সব গরু বাছুর ভিন্ন পানায় না, তারাও বেশ দুধ দিচ্ছে। ছোকরার রূপ দেখে ওরা কি জানি কি বুঝলে, কোন গোলমাল করলে না ; ছোকরাও দুধ খেয়ে ওই জঙ্গলের মধ্যে ঢুকে পড়ল। পরের দিন সকালে বনে খোজ ক'রে দেখে কিছুই না। খুঁজতে খুঁজতে এক শিবলিঙ্গ পাওয়া গেল । ওই যে শিবলিঙ্গ দেখছেন মন্দিরের মধ্যে। মাঘ মাসে মেলা হয়—ভারি জাগ্রত ঠাকুর । মালতী গর্কের দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে বললে—শুনলেন পাদ্রিমশাই ? মানেন না যে বড় কিছু ? অামি বললাম—আমি বেড়াতে বেড়াতে অনেক জায়গায় এরকম দেখেছি। কত গায়ে প্রাচীন বটতলার মুড়ি, ষষ্ঠদেবী, ওলাদেবী, কালিমূৰ্ত্তির প্রতিষ্ঠার মূলে এই ধরনের প্রবাদ আছে। লোকে কত দূর থেকে এসে পূজো দেয়, তাদের মধ্যে সত্যিকার ভক্তি দেখেছি। এক