পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/১৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>W。 বিভূতি-রচনাবলী শেষ আছে ? আমি ত এদের বলছি বাৰু, যেমন আকাশের শেষ নেই, পৃথিবীরও তেমনি শেষ নেই। কেমন, তাই না বাবুজী ? বেডাইতে আসিয়া এমন গুরুতর জটিল বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের সন্মুখীন হইতে হইবে, তাহ ভাবি নাই। রাজু পাডের দার্শনিক মন সৰ্ব্বদাই জটিল তত্ত্ব লইয়া কারবার করে জানি এবং ইহাও জানি যে ইহাদের সমাধানে সে সৰ্ব্বদাই মৌলিক চিন্তার পরিচয় দিয়া আসিতেছে, যেমন রামধন্থ উইয়ের ঢিবি হইতে জন্মায়, নক্ষত্রদল যমের চর মানুষ কি পরিমাণে বাডিতেছে তাহাই সরেজমিনে তদারক করিবার জন্ত যম কর্তৃক উহার প্রেরিত হয়—ইত্যাদি। পৃথিবীতত্ত্ব যতটা আমার জানা আছে বুঝাইয়া বলিতে রাজু বলিল—কেন স্বৰ্য্য পূৰ্ব্বদিকে ওঠে, পশ্চিমে অস্ত যায়, আচ্ছা কোন সাগর থেকে স্বৰ্য্য উঠছে আর কোন সাগরে নামছে এর কেউ নিরীকরণ করতে পেরেছে ? রাজু সংস্কৃত পডিয়াছে, ‘নিরীকরণ কথাটা ব্যবহার করাতে গাঙ্গেীত গৃহস্থ ও তাহার পরিবার-বর্গ সপ্রশংস ও বিমুগ্ধ দৃষ্টিতে রাজুর দিকে চাহিয়া রহিলএবংসঙ্গে সঙ্গে ইহাও ভাবিল ইংরেজীনবিশ বাংগালী বাবুকে কবিরাজ মশায় একেবারে কি অথৈ জলে টানিয়া লইয়া ফেলিয়াছে! বাংগালী বাৰু এবার হাবুডুবু খাইয়া মরিল দেখিতেছি । বলিলাম-রাজু, তোমার চোখের ভুল, স্বৰ্য্য কোথাও যায় না, এক জায়গায় স্থির আছে। রাজু আমার মুখের দিকে অবাক হইয়া রহিল। গাঙ্গোতার দল হা হা করিয়া তাচ্ছিল্যের স্বরে হাসিয়া উঠিল। হায় গ্যালিলিও,এই নাস্তিক বিচারমূঢ় পৃথিবীতেই তুমি কারাবদ্ধহইয়াছিলে! বিস্ময়ের প্রথম রেশ কাটিয়া গেলে রাজু আমার বলিল স্বর্যনারায়ণ পূৰ্ব্বে উদয়-পাহাড়ে উঠেন না বা পশ্চিম-সমুদ্রে অস্ত যান না ? বলিলাম-না। —এ-কথা ইংরিজি বইতে লিখেছে ? - 1 জ্ঞান মানুষকে সত্যই সাহসী করে ; যে শাস্ত, নিরীহ রাজু পাড়ের মুখে কখনও উচু স্বরে কথা শুনি নাই—সে সতেজে, সদৰ্পে বলিল—ঝুট, বাত বাবুজী । উদয়-পাহাড়ের যে- গুহা থেকে স্বর্যনারায়ণ রোজ ওঠেন সে গুহা একবার মুঙ্গেরের এক সাধু দেখে এসেছিলেন। অনেক দূর হেঁটে যেতে হয়, পূৰ্ব্বদিকের একেবারে সীমানায় সে পাহাড়, গুহার মুখে মন্ত পাথরের দরজা, ওঁর অভ্রের রথ থাকে সেই গুহার মধ্যে। যে-সে কি দেখতে পায় হুজুর ? বড় বড় সাধু মহাস্ত দেখেন। ঐ সাধু অভ্রের রথের একটা কুচি এনেছিলেন—এই এত বড় চকুচকে অভ্র-আমার গুরুভাই কামতাপ্রসাদ স্বচক্ষে দেখেছেন । কথা শেষ করিয়া রাজু সগৰ্ব্বে একবার সমবেত গাঙ্গোতাদের মুখের দিকে চক্ষু খুরাইরাফিরাইয়া চাহিল। উদয়-পৰ্ব্বতের গুহা হইতে সুৰ্য্যের উত্থানের এতবড় অকাট্য ও চক্ষুষ প্রমাণ উথাপিত করার পরে আমি সেদিন একেবারে নিশ্চপ হইয়া গেলাম।