পাতা:বিভূতি রচনাবলী (পঞ্চম খণ্ড).djvu/৩৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

छन्। ७ भृङ्क \రిలినీ সবাই বললে,—এখন ঘুর্ভিক্ষের সময়, সন্ধ্যার পরে এ পথে হাট নিরাপদ নয়। অনেক সময়, সামান্ত পয়সার জন্তে মানুষ খুন করেছে। আমার সঙ্গীর সঙ্গে ইতিমধ্যে আমার বেশ আলাপ পরিচয় হয়ে গিয়েছে । সে ব্রাহ্মণের ছেলে, নদীয়া জেলাতেই কোন গ্রামে বাড়ী, সংসারে কেউ নেই, দেশে দেশে ঘুরে বেড়ার। বছরখানেক পথে বিপথে ঘুরবার পরে সম্প্রতি নিজের গ্রামে ফিরে যাচ্ছে। একটা স্বভাব দেখলুম তার, সাধারণের পক্ষে স্বভাবটা খুব অদ্ভূত বলতে হবে। লোকের এতটুকু উপকার করতে পারলে সে যেন বেঁচে যায়। কাছের লোককে কি করে খুশি করবে, এই হ’ল তার জীবনে মস্ত বড় একটা নেশা ! রাত্রে সে-ই রান্না করলে। আমায় এতটুকু সাহায্য পৰ্য্যস্ত করতে দিলে না। খেতে বসে আমি বুঝলুম লোকটা পাকা রাধুনী। পাকা রাখুনী বললে সবট বলা হ’ল না। রান্নার কাজে সে একজন শিল্পী। উচুদরের প্রতিভাবান শিল্পী। সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম তার রান্না খেয়ে । বললাম—কোথায় শিখলে হে এমন চমৎকার রান্না ? ও বললে—কেউ শেখায় নি, এমনি হয়েচে । —তুমি কলকাতার কি অন্ত কোথাও মোটা মাইনের চাকুরি পেতে পারো হে, রান্নার কাজে । ধরে কোনো বড়লোকের বাড়ীতে। এ রকম ক’রে বেড়াও কেন ? সে হেসে বললে—তাও করেচি। কিন্তু আমার একটা বাতিক আছে বাৰু। সেজন্তে আর কোথাও চাকরি স্বীকার করতে ইচ্ছে হয় না। সে কথাটা খুলে বলি তবে । সেটাকে একরকম রোগও বলতে পারেন। হয়তো বা বায়ুরোগ। আমি ম্যাটিক পাস করে ভেবেছিলুম আরও পড়বে, কিন্তু অবস্থা খারাপ ছিল বলে পড়ার খরচ চালানো গেল না, মুতরাং ছেড়ে দিতে হ’ল । তারপর চাকরির সন্ধানে বেরুই। সিংস্থূম জেলার একটা পাহাড় ও জঙ্গলাকীর্ণ জায়গায় খনিসংক্রান্ত কি জরীপ হচ্চে। ঘুরতে ঘুরতে সেখানে গিয়ে জুটলাম। মস্ত বড় মাঠে অনেকগুলো তাৰু পড়েচে, অনেক লোক। আমি একজন ওভারসিয়ারের তাবুতে রাধুনীর কাজ পেয়ে গেলাম। লোকটির বয়েস চল্লিশের ওপর হবে। একাই থাকে, একটা চাকর ছিল, আমি যাবার পরে তাকে জবাব দিয়ে দিলে। কিছুদিন সেখানে কাজ করবার পর মনিবের প্রতি আমার একটা অদ্ভূত ধরনের ভালোবাসা লক্ষ্য করলুম। কিসে সে খুশি হবে, কিসে তাকে তৃপ্তি দিতে পারব থাইয়ে, এই হ’ল আমার একমাত্র লক্ষ্য । সে জিনিসটা একটা নেশার মত আমার পেয়ে বসল। সেই. জংলী জায়গায় খাবার জিনিল মেলে না, আমি হেঁটে দূর দূর গ্রাম থেকে মাছ তরকারী বহুকষ্টে সংগ্রহ করে এনে রাধতাম। মনিবকে সকল কথা খুলে বলতাম না যে, কোথা থেকে কি জিনিস আনি। রান্না যতদূর সম্ভব ভালো করবার চেষ্টা করতাম, যাতে খেয়ে তৃপ্তি পায়।