পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ষোড়শ পরিচ্ছেদ : “না” & Y না—একবার আকাঙ্ক্ষণ ভরিয়া মনে করি—তিনি আমায় ভালবাসেন । কমল কি কথাটি বলতে বলতে বলিল না ? সে ঐ কথাই । আচ্ছা, সে কথা কি সত্য –কিন্তু কমল জানিবে কিসে? আমি পোড়ারমুখী জিজ্ঞাসা করিতে পারিলাম না। ভালবাসেন ? কিসে ভালবাসেন ? কি দেখে ভালবাসেন, রূপ না গুণ ? রূপ—দেখি ? ( এই কহিয়৷ কালামুখী স্বচ্ছ সরোবরে আপনার প্রতিবিম্ব দেখিতে গেল, কিন্তু কিছুই দেখিতে না পাইয়। আবার পুর্বস্থানে আসিয়া বলিল ) “দূর হউক, যা নয় তা ভাবি কেন ? আমার চেয়ে সূৰ্য্যমুখী সুন্দর ; আমার চেয়ে হরমণি সুন্দর ; বিশু সুন্দর ; মুক্ত সুন্দর ; চন্দ্র সুন্দর ; প্রসন্ন সুন্দর ; বাম সুন্দর ; প্রমদা সুন্দর ; আমার চেয়ে হীর দাসীও সুন্দরী । হীরাও আমার চেয়ে সুন্দর ? ই ; শুশমবর্ণ হলে কি হয়—মুখ আমার চেয়ে সুন্দর। তা রূপ ত গোল্লাই গেল–গুণ কি ? আচ্ছা দেখি দেখি ভেবে।—কই, মনে ত হয় না। কে জানে ! কিন্তু মরা হবে না, ঐ কথা ভাবি । মিছে কথা ! তা মিছে কথাই ভাবি । মিছে কথাকে সত্য বলিয়া ভাবিব । কিন্তু কলিকাতায় যেতে হবে যে, তা ত যেতে পারিব না ; দেখিতে পাব না যে। আমি যেতে পারব না—পারব না—পারব না। তা ন৷ গিয়াই যা কি করি ? যদি কমলের কথা সত্য হয়, তবে ত যারা আমার জন্য এত করেছে, তাহাদের ত সৰ্ব্বনাশ করিতেছি। সূৰ্য্যমুখীর মনে কিছু হয়েছে বুঝিতে পারি। সত্যই হউক, মিথ্যাই হউক, কাজে কাজেই আমায় যেতে হবে। তা পারিব না। তাই ডুবে মরি । মরিবই মরিব । বাবা গো ! তুমি কি আমাকে ডুবিয়া মরিবার জন্য রাখিয়া গিয়াছিলে ;—” কুন্দ তখন দুই চক্ষে হাত দিয়া কাদিতে লাগিল । সহসা অন্ধকার গৃহে প্রদীপ জ্বালার স্যায়, কুন্দের সেই স্বপ্ন-বৃত্তান্ত সুস্পষ্ট মনে পড়িল । কুন্দ তখন বিদ্যুৎস্পৃষ্টার স্বায় গাত্ৰোখান করিল। “আমি সকল ভুলিয়া গিয়াছি—আমি কেন ভুলিলাম ? মা আমাকে দেখা দিয়াছিলেন—ম আমার কপালের লিখন জানিতে পারিয়া অামায় ঐ নক্ষত্ৰলোকে যাইতে বলিয়াছিলেন—আমি কেন তার কথা শুনলেম না—আমি কেন গেলাম না !— আমি কেন মলেম না । আমি এখনও বিলম্ব করিতেছি কেন ? আমি এখনও মরিতেছি না কেন ? আমি এখনই মরিব।” এই ভাবিয়া কুন্দ ধীরে ধীরে সেই সরোবরসোপান অবতরণ আরম্ভ করিল। কুন্দ নিতান্ত অবলা—নিতান্ত ভীরুস্বভাসম্পন্না—প্রতি পদার্পণে ভয় পাইতেছিল—প্রতি পদার্পণে তাহার অঙ্গ শিহরিতেছিল। তথাপি অঙ্খলিতসঙ্কল্পে সে মাতার আজ্ঞাপালনার্থ ধীরে ধীরে যাইতেছিল। এমত সময় পশ্চাৎ হইতে কে অতি