পাতা:বৃহৎ বঙ্গ - দীনেশচন্দ্র সেন.pdf/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শ্ৰেণীতে ভুক্ত হইয়াছেন; সুতরাং কোন রাজবংশে যদি আৰ্যসমাজের বহির্ভূত কোন সম্প্রদায়ের শোণিত প্রবিষ্ট হইয়া থাকে, তবে তাহা সাৰ্বজনীন রীতির দ্যোতক,- নিন্দার্হ নহে।

এই অধ্যায়টা একটু বড় হইল। যে কয়েকটি রাজবংশের কথা লিখিত হইল, তাহা ছাড়া আরও অনেক রাজবংশ বাঙ্গলাদেশে দ্বাপরযুগের ঐতিহাসিক মঞ্চের অভিনেতৃস্বরূপ দাবী উপস্থিত করিয়াছেন। নানারূপ পৌরাণিক উপগল্পের মিশ্রণীসত্ত্বেও একথাটা নিশ্চিতরূপে প্ৰতিপন্ন হইতেছে যে, মগধাশ্ৰিত মহাভারতীয় যুগের বাঙ্গলাদেশ, বিদ্যা-গৌরবে, যশঃ-প্রতিষ্ঠায় ও রাষ্ট্ৰীয় ক্ষমতায় একটি অতি শ্রেষ্ঠ দেশ ছিল। যুগে যুগে সমস্ত আর্যাবর্তের এমন কি তৎকালপরিচিত ভারতবর্ষের সার্বভৌম রাজশক্তি দিল্লী ও মগধ ইহাদের একতমের রাজধানীর আনুগত্য স্বীকার করিয়াছে। আমরা বাঙ্গলা দেশের প্রাচীন দলিলের কোন কোনটিতে দেখিয়াছি-‘সরকার ইন্দ্ৰপ্ৰস্থে’র দোহাই দেওয়া হইয়াছে। তৎসত্ত্বেও বাঙ্গলা চিরদিন দিল্লীর সহিত বিদ্রোহিতা করিয়া আসিয়াছে। ঐ রূপ দোহাই ব্ৰাহ্মণ্যপ্রভাবের পরিচায়ক।

শ্ৰীহট্টের বিস্তৃত ইতিহাস-লেখক শ্ৰীযুক্ত অচ্যুতচরণ চৌধুরী মহাশয় দাবী করিতেছেন, শ্ৰীহট্টের লাউড় নামক স্থান এককালে মহাভারতের ভগদত্তের রাজ্যের অন্তৰ্গত ছিল। বগুড়াক ইতিহাস-লেখক প্রভাসচন্দ্ৰ সেন বলেন যে উক্ত জেলার মহাস্থানগড় নামক স্থানটি সুপ্ৰসিদ্ধ পৌণ্ড্র বাসুদেবের রাজধানী ছিল। দিনাজপুরের ইতিহাসে ঐ দেশের কোন কোন অংশকে কৃষ্ণের পৌত্র অনিরুদ্ধের সঙ্গে বাণকন্যা উষার প্রণয়ঘটিত ব্যাপারের লীলাভূমি বলিয়া বর্ণিত আছে। মেদিনীপুরের বাগড়ি অঞ্চলটা ভীমকৃত বক-রাক্ষসবধের লীলাস্থল বলিয়া জনশ্রুতি আছে। এইভাবে বঙ্গদেশের কোন কোন অংশ বিরাটের গোগৃহ এবং কীচক-বধ্যভূমি বলিয়া নির্দিষ্ট হইয়া থাকে। সত্য সত্যই মহাভারতের সময়ে হুগলীর নিকট মহৌজা নামক এক বিক্ৰান্ত রাজা বিদ্যমান ছিলেন। কিন্তু যতগুলি কিংবদন্তী স্থানীয় লেখকগণ ঐতিহাসিক সত্য বলিয়া দ্বিধাশূন্যভাবে গ্ৰহণ করিয়াছেন, প্রমাণাভাবে তাহার অনেকগুলিই অশ্রদ্ধেয়। ১৮৯১ খৃঃ প্ৰকাশিত স্বরূপচন্দ্র রায়-কৃত সুবর্ণগ্রামের ইতিহাসে লিখিত হইয়াছে যে, সুবর্ণগ্রামের (জেলা ঢাকা) সন্নিহিত লাঙ্গলবন্ধে যুধিষ্ঠিরাদি পঞ্চপাণ্ডব আগমন করিয়াছিলেন (২৩ পৃঃ)। সুবৰ্ণগ্ৰাম নাম সম্বন্ধে এই লেখক বলেন “জনশ্রুতি যে অতি প্ৰাচীন কালে আকাশ হইতে এই বিস্তৃত ভূভাগের উপর সুবর্ণ বৰ্ষিত হইয়াছিল, তদবধি ইহা সুবর্ণগ্ৰাম নামে আখ্যাত হয়। সুবৰ্ণ বা সুবর্ণবৎ কোনও পদার্থের বর্ষণ অসম্ভব কথা নহে। ১৮১০ খৃঃ অব্দে ইউরোপের অন্তর্গত হাঙ্গেরী দেশে রক্ত ও অন্যান্য সময়ে পশুভক্ষণীয় বস্তু এবং ১৭৭৪ শকের ১৪ চৈত্রে চীনদেশে বালুকাবৃষ্টি হইয়াছিল। ১৮৮৭ খৃঃ ১১ই আগষ্ট বোম্বাই সহরে প্লাটিনাম বৃষ্টি হইয়াছিল৷” (৯ পৃঃ)।

জনশ্রুতি লিপিবদ্ধ করা যাইতে পারে, কিন্তু দিদিমার গল্পগুলিকে ঐতিহাসিক সত্য বলিয়া প্রমাণিত করিবার এইরূপ পাণ্ডিত্যের প্রচেষ্টা দেখিলে মনে হয় আমাদের লেখকের