পাতা:বৌ-ঠাকুরাণীর হাট - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৬
বৌ-ঠাকুরাণীর হাট

 “এইখানেই আছি বাপু, আর কোথায় যাইব?”

 সকলে সমস্বরে বলিল—“সে নেড়ে বেটা কোথায়?”

 বসন্তরায় বিব্রত হইয়া মাঝে পড়িয়া কহিলেন “হাঁ হাঁ বাপু, তােমার খাঁ সাহেবকে কিছু বলিও না।”

 প্রথম—“আজ মহারাজ, বড় কষ্ট পাইয়াছি, আজ সে—”

 দ্বিতীয়—“তুই থামনারে; আমি সমস্ত ভাল করিয়া গুছাইয়া বলি। সে পাঠান বেটা আমাদের বরাবর সােজা লইয়া গিয়া অবশেষে বাঁহাতি একটা আমবাগানের মধ্যে—”

 তৃতীয়—“নারে সেটা বাব্‌লা বন।”

 চতুর্থ—“সেটা বাঁহাতি নহে সেটা ডানহাতি!”

 দ্বিতীয়—“দুর ক্ষেপা, সেটা বাঁহাতি।”

 চতুর্থ—“তাের কথাতেই সেটা বাঁহাতি?”

 দ্বিতীয়—“বাঁহাতি না যদি হইবে তবে সে পুকুরটা—”

 উদয়াদিত্য—“হাঁ বাপু সেটা বাঁহাতি বলিয়াই বােধ হইতেছে তার পরে বলিয়া যাও।”

 দ্বিতীয়—“আজ্ঞা হাঁ! সেই বাঁহাতি আম বাগানের মধ্যে দিয়া একটা মাঠে লইয়া গেল। কত চষা মাঠ জমি জলা বাঁশঝাড় পার হইয়া গেলাম, কিন্তু গাঁয়ের নাম গন্ধও পাইলাম না। এমনি করিয়া তিন ঘণ্টা ঘুরিয়া গাঁয়ের কাছাকাছি হইতেই সে বেটা যে কোথায় পালাইল খোঁজ পাইলাম না।”

 প্রথম—“সে বেটাকে দেখিয়াই আমার ভাল ঠেকে নাই।”

 দ্বিতীয়—“আমিও মনে করিয়াছিলাম এই রকম একটা কিছু হইবেই।”

 তৃতীয়—“যখনি দেখিয়াছি নেড়ে, তখনই আমার সন্দেহ হইয়াছে!”

 অবশেষে সকলেই ব্যক্ত করিল যে তাহারা পূর্ব্ব হইতেই সমস্ত বুঝিতে পারিয়াছিল।