পাতা:ভারত পথিক - সুভাষ চন্দ্র বসু.pdf/২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

সেনাপতিদের সাহায্যেই। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রে নবাব সিরাজদৌল্লার যে সেনাপতি ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধ করেন, তিনি হিন্দু ছিলেন। আর ১৮৫৭ সালে ইংরেজদের বিরুদ্ধে হিন্দু-মুসলমানের সম্মিলিত বিদ্রোহের নেতা ছিলেন একজন মুসলমান—বাহাদুর শাহ।

যাই হোক, ইংরেজরা ভারত দখল করবার পর বাঙলাদেশে যে ক'জন মনীষীর আবির্ভাব হয়েছিল, যে কারণেই হোক তাঁদের অধিকাংশই ছিলেন হিন্দু। এদের মধ্যে রাজা রামমোহন রায় (১৭৭২-১৮৩৩) অন্যতম। ১৮২৮ সালে ইনি ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠিত করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর প্রারম্ভে বাঙলাদেশে ধর্ম ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে এক নতুন ধারার সুচনা দেখা দেয়। এর মূলে ছিল নবগঠিত ব্রাহ্মসমাজ। এই আন্দোলন অনেকটা রেনেসাঁস ও রেফরমেশন-এর একটি সমন্বয়ের মতো। এদিকে এই আন্দোলন দেশের স্বকীয় ঐতিহ্যের পূনর‍ূদ্ধার এবং ধর্মের সংস্কারের পক্ষপাতী ছিল এবং অন্য দিকে, অন্যান্য দেশের ধর্ম ও সংস্কৃতি থেকে ভালো জিনিসটুকু গ্রহণ করতেও কম উৎসুক ছিল না। এই নবজাগরণের অগ্রদত ছিলেন রামমোহন রায়। ভারতবর্ষের ইতিহাসে তিনি এক নতুন অধ্যায় সৃষ্টি করে গেছেন। তিনি যে কাজ আরম্ভ করেছিলেন, তাঁর মৃত্যুর পর কবিবর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর (১৮১৮-১৯০৫) এবং ব্রহ্মানন্দ কেশবচন্দ্র সেন তার ভার গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মসমাজের প্রভাব ক্রমেই বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক সময়ে ব্রাহ্মসমাজই যে দেশের সব রকম প্রগতিশীল আন্দোলনের কর্ণধার ছিল সে কথা সকলেই স্বীকার করবে। প্রথম থেকেই ব্রাহ্মসমাজের দৃষ্টিভঙ্গীতে পাশ্চাত্য বিজ্ঞান ও দর্শনের প্রভাব পড়েছিল এবং সদ্যপ্রতিষ্ঠিত বৃটিশ সরকার যখন

১৬