পাতা:মরণের ডঙ্কাবাজে - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

মরণের ডঙ্কা বাজে

পেছনে ফেলে রেখে প্রকাণ্ড জাহাজখানা সমুদ্রের দিকে এগিয়ে চলেচে। ভোর ছ'টায় জাহাজ ছেড়েছিল, এখন বেশ রৌদ্র উঠেচে, ডেকের একদিকে অনেকখানি জায়গায় যাত্রীরা ডেক চেয়ার পেতে গল্পগুজব জুড়ে দিয়েচে, ষ্টীমারের একজন কর্ম্মচারী সবাইকে বলে গেল পাইলট নেমে যাওয়ার আগে যদি ডাঙায় কোনো চিঠি পাঠানো দরকার হয় তা যেন লিখে রাখা হয়।

 বয় এসে বল্লে― আপনাকে চায়ের বদলে আর কিছু দেবো?

 সুরেশ্বর সেকেণ্ড ক্লাসের যাত্রী, সে চা খায় না, এ খবর আগেই জানিয়েছিল এবং কিছু আগে সকলকে চা দেওয়ার সময়ে চায়ের পেয়ালা সে ফেরৎ দিয়েছে।

 সুরেশ্বর বললে― না, কিছু দরকার নেই। বয় চলে গেল।

 এমন সময়ে কে একজন বেশ মার্জ্জিত ভদ্র সুরে ওর পেছনের দিক থেকে জিজ্ঞাসা করলে― মাপ করবেন, মশায় কি বাঙালী?

 সুরেশ্বর পেছন ফিরে চেয়ে দেখলে বিস্ময়ে এইমাত্র একজন নব আগন্তুক যাত্রী তার ডেক চেয়ার পাতবার মাঝখানে থমকে দাড়িয়ে তাকে এই প্রশ্ন করছে। তার বয়স পঁচিশ ছাবিবশের বেশী নয়, একহারা দীর্ঘ সুঠাম চেহারা। সুন্দর মুখশ্রী, চোখ দুটি বুদ্ধির দীপ্তিতে উজ্জল― সবশুদ্ধ মিলিয়ে বেশ সুপুরুষ। সুরেশ্বর উত্তর দেওয়ার আগেই সে লোকটি হাসিমুখে বল্লে― কিছু মনে করবেন না, একসঙ্গেই ক'দিন থাকতে হবে আপনার সঙ্গে, একটু আলাপ করে নিতে চাই। প্রথমটা বুঝতে পারিনি আপনি বাঙ্গালী কি না।

 সুরেশ্বর হেসে বল্লে― এর আর মনে করার কি? ভালই তো হোল। আমার পক্ষেও। সেকেণ্ড ক্লাসে আর বাঙালী নেই?