পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৩৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মাণিক গ্ৰন্থাবলী বছর তিনেক আগে তারা যে কোথায় উঠিয়া চলিয়া গিয়াছে, আর জানা যায় না । বোধ হয়, সহরতলীর উত্তর দিকে যে নূতন মুসলমান পঞ্জীটি গড়িয়া উঠিয়াছে, সেইখানে গিয়া বসবাস আরম্ভ করিয়াছে। এ পাড়ায় আগেকার সেই ভাঙ্গা ঘরের বাসিন্দা শ্রমিক শ্রেণীর গরীব মুসলমানদের বদলে এলোমেলো ভাবে কয়েকটি পাকা বাড়ীতে কয়েক ঘর ভদ্র মুসলমান পরিবার আসিয়াছে, এরা সকলেই চাকুরীজীবী। পরিষ্কার বেশভূষা করিয়া পরিশ্রমের অভাবে বেঢপ শরীর লইয়া নটা-দশটার সময় প্ৰত্যেক দিন এদের ট্রামের উদ্দেশ্যে ব্যস্ত হইয়া ছুটিতে দেখিলে সেই অশিক্ষিত নিম্নশ্রেণীর মুসলমান পরিবার কয়েকটির জন্য যশোদার কষ্ট হয়। তবে সহরতলীর ধীরে ধীরে সহরে পরিণত হওয়ার বিরুদ্ধে যশোদার কোন নালিশ নাই,-যদি তার মনের মত সহরে পরিণত হয় । এ বিষয়ে বড় আশ্চৰ্য্য ও নিখুঁত কল্পনা আছে যশোদার, তার এই পাড়াকে কেন্দ্ৰ করিয়া এই সহরতলীকে সে বড় সহরটির সঙ্গে সংলগ্ন একটি সুবিন্যস্ত, পরিচ্ছন্ন, সুশ্ৰী নগররূপে কল্পনা করিতে পারে। সে নগরে পল্পীর সবুজ রূপের বাহুল্য নাই, নগরবাসীর জীবন পল্পীবাসীর জীবনের মত সহজ-সরলও নয়। পল্লীর সঙ্গে যশোদার যথেষ্ট পরিচয় আছে, কিন্তু পঞ্জীর রূপ তার চোখে পড়ে না, ঝোপ-ঝাড়-জঙ্গল, পচা জলের ডোবা-পুকুর, নোংরা। পথঘাট, জীণ ঘরবাড়ী ক্ষেত-খামারের মন-ভুলানো, চোখ-জুড়ানো শ্ৰী তার সানসনয়নে পৰ্যন্ত অতি বিশ্ৰী ঠেকে এবং ঘষা পড়ার অভাবে পল্লীবাসীর বুদ্ধিটা একটু ভোতা বলিয়াই সহরবাসীর চেয়ে তাদের সরলতা কেন বেশী হইবে যশোদা বুঝতে পারে না, সঙ্কীণী জগতে একঘেয়ে অনাড়ম্বর জীবন যাপন করে বলিয়া জীবনটাই বা তাদের সহরবাসীর চেয়ে সহজ হইবে কেন তাও যশোদা বুঝিতে পারে না-পল্লীবাসীরাও তো কম। গরীব নয় ? যশোদার কল্পনার নগর তাই সহররূপী গ্ৰাম নয়, সহৱই বটে । নগরের পথে ট্রাম চলে, পথের দু’পাশে পাচ সাততলা বাড়ী থাকে, দোকান থাকে, সিনেমা থাকে, পার্ক থাকে, গলি থাকে, হাজার হাজার মানুষ থাকে, অনেক কিছুই থাকে সহরের । কেবল সেই সঙ্গে সঙ্গে থাকে সামঞ্জস্য, বড় বাড়ীর আড়ালে ছোট বাড়ীর ফাপর লাগে না, গলি ঘুজির গোলক ধাধা থাকে না, নাকে ও লাগে, গায়েও ন্যাপটাইয়া যায় এমন ভান্সা দুৰ্গন্ধ কোন গলিতে কোন বাড়ীতে পাওয়া যায় না, আর আৱ, সত্যপ্রিয় অবশ্য মোটাৱে চড়িয়াই বেড়ায় যশোদার নগরে, কিন্তু v98R