পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৫৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শৈলজ শিলা ইহাদের ভিতর চাটুজ্যে লোকটা অতি বদ। বলে, “না না। এ ঠাট্টার কথা নয়। মেয়েটি ডাগর হয়েছে, এবার বিয়ে দেওয়া কর্তব্য। আমাদের এই ভূপেনের সঙ্গে সম্বন্ধ করে না ?” ভূপেন ছোড়া পাড়ার হৃদয় ডাক্তারের পুত্র এবং পাড়ার মধ্যে বোধকরি সবচেয়ে সুপিাত্ৰ। অন্দরে ঢুকিতে দিই না, তবু নিত্য আমাদের এই আডায় হাজির হয়। বোধহয় পান জল দিবার জন্য শিলা যে বাহিরে আসে। সেই সময় তাহাকে দেখিবার লোভে। চাটুজ্যের কথায় ছোড়ার মুখ লাল হইয়া উঠিয়াছে দেখিয়া মনে মনে স্থির করিয়া ফেলি। এবার হইতে পানীজল দিবার বরাতটা চাকরের উপরেই থাকিবে । মুখুজ্যে চাটুজ্যে অপেক্ষাও পাজী । স্মিতমুখে ভূপেনের দিকে চাহিয়া বলে, “বড়ো ভালো ছেলে, বড়ো ভালো ছেলে । পাড়ার সবগুলি ছেলে এরকম হলে--” ঠিক এমনি সময়ে পান নিয়া ঘরে ঢুকিয়া শিলা প্ৰশংসাগুলি সব শোনে। ইচ্ছা! হয় মেয়েটাকে অন্দরে ছুড়িয়া দিয়া লাঠি নিয়া সকলকে মোড় পৰ্যন্ত তাড়াইয়া নিয়া যাই আর ভূপেনের মাথায় বসাইয়া দিই সেই লাঠি । পুলিসের হাত এড়াইয়া শিলাকে নিয়া তার সেই আঁতুড়ের গুহাতে চিরকাল লুকাইয়া থাকি। সেই অপরিসর গুহায় ঘোষা ঘোষি হইয়া রাত কাটানোর সমর্থন পাইলে আমি কি না করিতে পারি? সকলকে বিদায় দিয়া ভিতরে গিয়াই শিলাকে বলি, “বিয়ে করবি শিলা ?” সে মাথা নাড়িয়া বলে, “না দাদু বিয়ে আমি করব না ।” “তবে কি করবি ?? “তোমার কাছে থাকব ।” “তা থাকিস । কিন্তু চিরকাল নাতনী হয়েই থাকিবি ? বেী হয়ে থাক না।” “দূর ছোটলোক!’ বলিয়া সে হাসে। তাহার মুখ হইতে যে দৃষ্টি সরাইতে পারি না, তাহা এমনি মুখর যে চক্ষু মার্জনার ছলে ঢাকিয়া দিতে হয়। আপসোস করিয়া মারি যে কোন মহৎ উদ্দেশ্য নিয়া ওর দাদু হইয়া স্নেহ শিখাইয়াছি, স্বামী হইয়া প্রেম শিখাই নাই। আজ তাহা হইলে চিন্তাটা বড়ো জটিল। আমার স্নেহের পুত্তলী আমাকে এমনভাবে ঠিকাইবে কে তাহা ভাবিতে পারিয়াছিল ? ইচ্ছা হয় জন্মের কাহিনী শুনাইয়া মেয়েটাকে ভাঙিয়া দিই। উহার মুখের নিষ্পাপ সরলতা ঘুচিয়া গিয়া আমার পথ পরিষ্কার হোক । ¢ፃነ