পাতা:মানিক গ্রন্থাবলী.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

আগে শ্যামার সঙ্গে তাহাদের যে কথা হইল, তাহা এই —

 শ্যামা বলিল — কোথায় যাচ্ছ শুনি?

 শীতল বলিল — চুলোয়।

 শ্যামা বলিল — পায়েস খেয়ে যাও।

 বকুল বলিল — তোমার পায়েস আমরা খাই নে।

 শ্যামা বলিল — দেখো, ভাল করছ না কিন্তু তুমি। আদর দিয়ে দিয়ে মেয়ের তো মাথা খেলে।

 এর জবাবে শীতল বা বকুল কেহই কিছু বলিল না। পা দিয়া পায়সের বাটি উঠানে ছুঁড়িয়া শ্যামা ফেলিল কাঁদিয়া।

 রাত প্রায় ন’টার সময় দুজনে ফিরিয়া আসিল। বকুলের গায়ে নতুন জামা, পরনে নতুন কাপড়, দু-হাত বোঝাই খেলনা, আনন্দে বকুল প্রায় পাগল। আজ কিছুক্ষণের জন্য সকলের সঙ্গেই সে ভাব করিল, শ্যামার অপরাধও মনে রাখিল না, মহোৎসাহে সকলকে সে তাহার সম্পত্তি দেখাইল, বাবার সঙ্গে কোথায় কোথায় গিয়াছিল, গল গল করিয়া বলিয়া গেল।

 শীতল উৎসাহ দিয়া বলিল — কি খেয়েছিস বললি না বুকু?


পরদিন রাত্রে প্রেস হইতে ফিরিয়া বকুলকে শীতল দেখিতে পাইল না। শ্যামা বলিল — মামার সঙ্গে সে বনগাঁয়ে পিসির কাছে বেড়াইতে গিয়াছে।

 — আমায় না বলে পাঠালে কেন?

 — বললে কি আর তুমি যেতে দিতে? যাবার জন্য কাঁদাকাটা করতে লাগল, তাই পাঠিয়ে দিলাম।

 — হঠাৎ বনগাঁ যাবার জন্য ও কাঁদাকাটা করল কেন?

 — কাল পরশু ফিরে আসবে।

 ঝোঁকের মাথায় কাজটা করিয়া ফেলিয়া শ্যামার বড় ভয় আর অনুতাপ হইতেছিল, সে আবার বলিল — পাঠিয়ে অন্যায় করেছি। আর করব না।

 শীতলের কাছে ত্রুটি স্বীকার করিতে আজকাল শ্যামার এমন বাধা বাধ ঠেকে! নিজে চারিদিকে সব ব্যবস্থা করিয়া করিয়া স্বভাবটা কেমন বিগড়াইয়া গিয়াছে, কোনো

৮৯