পাতা:মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/২৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

bang labOOKS. in দিবারাত্রির কাবা S RS খুব আশ্চর্য না ব্যাপারটা? হাসির কথা পড়লে কিংবা শুনলে মানুষ হাসবে,-কেউ হাসবে তবে! হাসবার মতো কিছু হাতের কাছে না থাকলে কেউ মরলেও হাসতে পারবে না। হাসির উপলক্ষটা সব সময় থাকবে বাইরে, আবাব তা থেকে তার নিজেকে বাদ থাকতে হবে। এ সব কথা ভাবলে আমি একেবাবে আশ্চর্য হয়ে যাই। হাসি এমন ভালো জিনিস, নিজের জন্য কেউ নিজে তা তৈরি করতে পারবে না! সাধে কি মানুষ দিনরাত মুখ গোজ করে থাকে। মাঝে মাঝে একটু একটু না হোসে মানুষ যদি সব সময় হাসতে পারত ! মালতী বলল, তোর আজ কী হয়েছে রে আনন্দ ? এত কথা কইছিস যে ? আনন্দ বলল, বেশি কথা বলছি ? বলব না! তোমরা থাকবে যে যাব তালে, চুপ করে থেকে আমাব এদিকে কথা জমে জমে হিমালয় পাহাড় ! সুযোগ পেলে বলব না বেশি কথা ? তুই আজ নিশ্চয় চুরি করে কাবণ খেয়েছিস! না গো না, চুরি করে ছাইপােশ খাবাব মেয়ে আমি নই। মনের স্মৃর্তিব জন্য আমাব কাবণ খেতে হয না। ’ হেবম্বেব কাছে এইটুকু গৰ্ব্ব প্রকাশ করেই আনন্দ বোধ হয় নিজেকে এত বেশি প্রকাশ কৰা হযেছে বলে মনে কবে যে, কিছুক্ষণেব জন্য মালতীর দেহের আডালে নিজেকে সে প্রায় সম্পূর্ণ লুকিয়ে ফেলে। অথচ এ কাজটা সে এমন একটি ছলনাব আশ্রয়ে করে যে মালতী বুঝতে পারে না, হে বস্ত্ৰ বুঝতে ভাবসা পায না। মালতী বলে, কোমব টনটিন করছে বলে তোকে আমি টিপতে বলিনি আনন্দ ! এমনি টিপুনিতে যদি ব্যথা কমত। তবে আবি ওভাবনা ছিল না। হেবঙ্গ শুধু আনন্দেব পায্যের পাতা দুটি দেখতে পায়। আঙুল বাঁকিযে আনন্দ পাযেবা নখ সিঁডিব সিমেন্টে একটা খাজে আটকেছে। হেবিশ্বেব মনে হয, আনন্দেৰ আঙুলে ব্যথা লাগছে। এ ভাবে তাব নিজেকে বাথা দেবােব কারণটা সে কোনোমতেই অনুমান কবতে পাবে না। সিমেন্টেব খাজ থেকে আনন্দের আঙুল কটিকে মুক্ত কবে দেবার জন্য তার মনে প্রবল আগ্রহ দেখা দেয ! একটি নিরীহ ছোটাে কালো পিপড়ে যাবা কখনও কামডায না। কিন্তু একটু ঘষা পেলেই নিশ্চিহ্ন হয়ে প্রাণ দেয়, সেই জাতের একটি অতি ছোটো পিঁপড়ে, আনন্দের আঙুলে উঠে হেবম্বের চেতনায় নিজের ক্ষীণতম অস্তিত্বকে ঘোষণা কবে দেয। হেবিম্ব তাকে স্থানচু্যত কবতে গিযে হত্যা করে ফেলে। আনন্দ বলে, কি ? একটা পোকা । কী পোকা ? বিষপিপড়ে বোধ হয়। মালতী বলে, একটা বিষপিপড়ে তাড়াতে তুমি ওব পায়ে হাত দিলে! —আহা কী কবিস আনন্দ, করিস নে, পায়ে হাত দিয়ে প্ৰণাম করিস নে। কুমারীর কাউকে প্ৰণাম করতে নেই জানিস নে তুই ? আনন্দ হেরম্বকে প্ৰণাম করে বলল, তোমার ও সব অদ্ভুত তান্ত্রিক মত আমি মানি না মা। হেবম্বের আশঙ্কা হয় মেয়ের অবাধ্যতায় মালতী হয়তো বেগে আগুন হয়ে উঠবে। কিন্তু তাব পরিবর্তে মালতীর দুঃখই উথলে উঠল। আগেই জানি কথা শুনবে না! এ বাড়িতে কেউ আমার কথা শোনে না হেরম্বা। আমি এখানে দাসী-বাদীরও অধম । বলত ওর বাপ, দেখতে কথা শোনার কী ঘটা মেয়ের ! আমি তুচ্ছ মা বই তো নাই। মানিক ১ম-১৮