পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৯৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

>bペ রবীন্দ্র-রচনাবলী কাজে সাহায্য করবার প্রস্তাব করতেই সে চমকে উঠে অfপত্তি করে—তার পরে অন্য প্রসঙ্গ উঠে পড়ে । সেদিন বৃহস্পতিবারের বারবেলায় পূর্বোক্ত রকমের শক লক্ষ্য করেই ঘর থেকে রওনা হয়েছিলুম। পথের মাঝখানে বারান্দায় দেখি এক দরোয়ান খাড়া। তার প্রতি ক্ৰক্ষেপ না করেই আমি চলেছিলুম—এমন সময় সে পথ আগলে বললে, বাৰু ওদিকে ষাবেন না । যাব না ? কেন ? বৈঠকখানা-ঘরে রানীমা আছেন । আচ্ছা, তোমার রানীমাকে খবর দাও যে সন্দীপবাবু দেখা করতে চান । না সে হবে না, হুকুম নেই । ভারি রাগ হল, গলা একটু চড়িয়ে বললুম, আমি হুকুম করছি তুমি জিজ্ঞাস করে ! }7{ی গতিক দেখে দরোয়ান একটু থমকে গেল। তখন আমি তাকে পাশে ঠেলে ঘরের দিকে এগোলুম। যখন প্রায় দরজার কাছ-বরাবর পৌছেছি এমন সময় তাড়াতাড়ি সে কর্তব্য পালন করবার জন্তে ছুটে এসে আমার হাত চেপে ধরে বললে, বাবু যাবেন না । কী। আমার গায়ে হাত । আমি হাত ছিনিয়ে নিয়ে তার গালে এক চড় কষিয়ে দিলুম। এমন সময়ে মক্ষী ঘর থেকে বেরিয়ে এসেই দেখে দরোয়ান আমাকে অপমান করবার উপক্রম করছে । তার সেই মূর্তি আমি কখনো ভুলব না । মক্ষী যে স্বন্দরী সেটা আমার আবিষ্কার। আমাদের দেশে অধিকাংশ লোক ওর দিকে তাকাবে না। লম্ব ছিপছিপে গড়ন, যাকে আমাদের রূপরসজ্ঞ লোকেরা নিন্দে করে বলে, “ঢ্যাঙা” । ওর ওই লম্ব। গড়নটিই আমাকে মুগ্ধ করে—যেন প্রাণের ফোয়ারার ধারা, স্বষ্টিকর্তার হৃদয়-গুহা থেকে বেগে উপরের দিকে উচ্ছসিত হয়ে উঠেছে। ওর রং শামলা—কিন্তু সে যে ইস্পাতের তলোয়ারের মতো শামলা—কী তেজ আর কী ধার। সেই তেজ সেদিন ওর সমস্ত মুখে চোকে ঝিকমিক করে উঠল। চৌকাঠের উপর দাড়িয়ে তর্জনী ভুলে রানী বললে, নলকু, চলা যাও । আমি বললুম, আপনি রাগ করবেন না—নিষেধ যখন আছে তখন আমিই চলে যাচ্ছি। মক্ষী কম্পিতম্বরে বললে, না আপনি যাবেন না—ঘরে আমুন।