পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী عدد আমি মাস্টারমশায়কে জিজ্ঞাসা করলুম, আপনি এখনো ঘুমোন নি কেন ? তিনি একটু হেসে বললেন, আমার এখন ঘুমোবার বয়স গেছে, এখন জেগে থাকবার বয়স । এই পর্যস্ত লেখা হয়ে গুতে যাব যাব করছি এমন সময়ে আমার জানলার সামনের আকাশে শ্রাবণের মেঘ হঠাৎ একটা জায়গায় ছিন্ন হয়ে গেল—আর তারই মধ্যে থেকে একটি বড়ো তার জল জল করে উঠল । আমার মনে হল আমাকে সে বললে, কত সম্বন্ধ ভাঙছে গড়ছে স্বপ্নের মতো—কিন্তু আমি ঠিক আছি ;–আমি বাসরঘরের চিরপ্রদীপের শিখা, আমি মিলনরাত্রির চিরচুম্বন । সেই মুহূর্তে আমার সমস্ত বুক ভরে উঠে মনে হল—এই বিশ্ববস্তুর পর্দার আড়ালে আমার অনস্তকালের প্রেয়সী স্থির হয়ে বসে আছে। কত জন্মে কত আয়নায় ক্ষণে ক্ষণে তার ছবি দেখলুম-কত ভাঙা আয়না, বাক আয়না, ধুলোয় অস্পষ্ট আয়না। যখনই বলি, আয়নাটা আমারই করে নিই, বাক্সর ভিতর ভরে রাখি, তখনই ছবি সরে যায়। থাকৃ না, আমার আয়নাতেই বা কী, আর ছবিতেই বা কী। প্রেয়সী, তোমার বিশ্বাস অটুট রইল, তোমার হাসি মান হবে না, তুমি আমার জন্তে সীমস্তে যে সি দুরের রেখা একেছ প্রতিদিনের অরুণোদয় তাকে উজ্জল করে ফুটিয়ে রাখছে । একটা শয়তান অন্ধকারের কোণে দাড়িয়ে বলছে, এ-সব তোমার ছেলেভোলানো কথা ! তা হ'ক না, ছেলেকে তো ভোলাতেই হবে—লক্ষ ছেলে, কোটি ছেলে, ছেলের পর ছেলে—ক’ত ছেলের কত কান্না । এত ছেলেকে কি মিথ্যে দিয়ে ভোলানো চলে ? অামার প্রেয়সী আমাকে ঠকাবে না— সে সত্য, সে সত্য—এই জন্তে বারে বারে তাকে দেখলুম, বারে বারে তাকে দেখব—ভুলের ভিতর দিয়েও তাকে দেখেছি, চোখের জলের ঘন কুয়াশার মধ্য দিয়েও তাকে দেখা গেল । জীবনের হাটের ভিড়ের মধ্যে তাকে দেখেছি, হারিয়েছি, আবার দেখেছি, মরণের ফুকরের ভিতর দিয়ে বেরিয়ে গিয়েও তাকে দেখব । ওগো নিষ্ঠুর, আর পরিহাস ক’রো না—যে-পথে তোমার পায়ের চিহ্ন পড়েছে, যে-বাতাসে তোমার এলোচুলের গন্ধ ভরে আছে, এবার যদি তার ঠিকানা ভুল করে থাকি তবে সেই ভুলে আমাকে চিরদিন কাদিয়ে না। ওই ঘোমটা-খোলা তারা আমাকে বলছে, না না, ভয় নেই, যা চিরদিন থাকবার তা চিরদিনই আছে। এইবার দেখে আসি আমার বিমলকে,—সে বিছানায় এলিয়ে পড়ে ঘুমিয়ে আছে। তাকে না জাগিয়ে তার ললাটে একটি চুম্বন রেখে দিই। সেই চুম্বন আমার পূজার