পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ঘরে-বাইরে &©ዓ তার প্রায় সকলেই মাস্টারমশায়ের ছাত্র, স্পষ্ট কোনো কটু কথা বলতে পারল না, কিন্তু রাগে তাদের রক্ত গরম হয়ে বুকের মধ্যে ফুটতে লাগল। আমার দিকে চেয়ে বললে, দেখুন, সমস্ত দেশ আজ যে-ব্রত গ্রহণ করেছে কেবল আপনি তাতে বাধা দেবেন ? আমি বললুম, আমি বাধা দিতে পারি এমন সাধ্য আমার কী আছে। আমি বরং প্রাণপণে তার আহুকুল্য করব। এম. এ. ক্লাসের ছাত্রটি বাক-হাসি হেসে বললে, কী আমুকুলাটা করছেন ? আমি বললুম, দিশি মিল থেকে দিশি কাপড় দিশি স্বতে আনিয়ে আমাদের হাটে রাখিয়েছি—এমন কি, অন্ত এলেকার হাটেও আমাদের স্থতো পাঠাই— সে ছাত্রটি বলে উঠল, কিন্তু আমরা আপনার হাটে গিয়ে দেখে এসেছি, আপনার দিশি স্থতো কেউ কিনছে না । আমি বললুম, সে আমার দোষ নয়, আমার হাটের দোষ নয় ; তার একমাত্র কারণ, সমস্ত দেশ তোমাদের ব্ৰত নেয় নি । মাস্টারমশায় বললেন, শুধু তাই নয়, যারা ব্রত নিয়েছে তারা বিব্রত করবারই ব্ৰত নিয়েছে। তোমরা চাও, যারা ব্ৰত নেয় নি তারাই ওই স্থতো কিনে, যারা ব্ৰত নেয় নি এমন জোলাকে দিয়ে কাপড় বোনাবে, আর যারা ব্ৰত নেয় নি তাদের দিয়ে এই কাপড় কেনাবে। কী উপায়ে ? না তোমাদের গায়ের জোরে, আর জমিদারের পেয়াদার তাড়ায় । অর্থাৎ ব্ৰত তোমাদের, কিন্তু উপবাস করবে ওরা, আর উপবাসের পারণ করবে তোমরা । সায়ান্স ক্লাসের ছাত্রটি বললে, আচ্ছা বেশ, উপবাসের কোন অংশটা আপনারাই নিয়েছেন শুনি । মাস্টারমশায় বললেন, শুনবে ? দিশি মিল থেকে নিখিলের সেই সুতো নিখিলকেই কিনতে হচ্ছে, নিখিলই সেই স্বতোয় জোলাদের দিয়ে কাপড় বোনাচ্ছে, তাতের ইস্কুল খুলে বসেছে, তার পরে বাবাজির যে-রকম ব্যবসাবুদ্ধি তাতে সেই স্বতোয় গামছা যখন তৈরি হবে তখন তার দাম দাড়াবে কিংখাবের টুকরোর মতে, স্বতরাং সে-গামছা নিজেই কিনে উনি ওঁর বসবার ঘরের পর্দা খাটাবেন, সে-পর্দায় ওঁর ঘরের আবরু থাকবে না ; ততদিনে তোমাদের যদি ব্ৰত সাঙ্গ হয়, তখন দিশি কারুকার্যের নমুনা দেখে তোমরাই সব-চেয়ে চেচিয়ে হাসবে ; আর, কোথাও যদি সেই রঙিন গামছার অর্ডার এবং আদর মেলে সে ইংরেজের কাছে। এতদিন ওঁর কাছে আছি, মাস্টারমশায়ের এমনতরো শান্তিভঙ্গ হতে আমি