পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (অষ্টাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪১০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রবীন্দ্র-রচনাবলী وان وخO\ করা মানুষের ধর্ম নহে ; কেননা অনেক-লোকই পরের অন্ন কাড়িবার বাধাহীন সুযোগ পাইলে নিজেকে সার্থক মনে করে। তবু আজ পর্যন্ত মানুষ একথা বলিতে কুষ্ঠিত হয় নাই যে দয়াই ধর্ম, দানই পুণ্য। 品 কিন্তু মানুষের পক্ষে যাহা সত্য মানুষের পক্ষে তাহাই যে সহজ তাহা নহে। তবেই দেখা যাইতেছে সহজকেই আপনার ধর্ম বলিয়া মানিয়া লইয়া মানুষ আরাম পাইতে চায় না, এবং যে-কোনো দুর্বলচিত্ত সহজকেই আপনার ধর্ম বলিয়াছে এবং ধর্মকে আপনার সুবিধামত সহজ করিয়া লইয়াছে তাহার আর দুৰ্গতির অস্ত থাকে না । আপন ধর্মের পথকে মানুষ বলিয়াছে—ফুরন্ত ধারা নিশিতা দুরত্যয় দুর্গং পথপ্তং কবয়ে বদন্তি । দুঃখকে মানুষ মনুষ্যত্বের বাহন বলিয়া গণ্য করিয়া লইয়াছে এবং সুখকেই সে মুখ বলে নাই, বলিয়াছে-ভূমৈব সুখম্। এই জন্যই এই বড়ো একটি আশ্চর্ষ ব্যাপার দেখা যায় যে, র্যাহারা মাতুষকে অসাধ্যসাধনের উপদেশ দিয়াছেন, র্যাহাদের কথা শুনিলেই হঠাৎ মনে হয় ইহা কোনোমতেই বিশ্বাস করিবার মতো নহে, মানুষ র্তাহাদিগকেই শ্রদ্ধা করে অর্থাৎ বিশ্বাস করে । তাহার কারণ মহত্বই মানুষের আত্মার ধর্ম ; সে মুখে যাহাই বলুক শেষকালে দেখা যায় সে বড়োকেই যথার্থ বিশ্বাস করে । সহজের উপরেই তাহার বস্তুত শ্রদ্ধা নাই ; অসাধ্যসাধনকেই সে সত্য সাধনা বলিয়া জানে ; সেই পথের পথিককেই সে সর্বোচ্চ সম্মান না দিয়া কোনোমতেই থাকিতে পারে না । 弼 র্যাহারা মানুষকে দুর্গম পথে ডাকেন, মানুষ র্তাহাদিগকে শ্রদ্ধা করে, কেননা মানুষ র্তাহীর শ্রদ্ধা করেন । র্তাহারা মানুষকে দীনাত্মা বলিয়া অবজ্ঞা করেন না । বাহিরে র্তাহারা মামুষের যত দুর্বলতা যত মূঢ়তাই দেখুন না কেন তবুও তাহারা নিশ্চয় জানেন যথার্থত মানুষ হৗনশক্তি নহে—তাহার শক্তিহীনতা নিতান্তই একটা বাহিরের জিনিস ; সেটাকে মায়া বলিলেই হয়। এই জন্য র্তাহারা যখন শ্রদ্ধা করিয়া মানুষকে বড়ো পথে ভাকেন তখন মানুষ আপনার মায়াকে ত্যাগ করিয়া সত্যকে চিনিতে পারে, মানুষ নিজের মাহাত্ম্য দেখিতে পায় এবং নিজের সেই সত্যস্বরূপে বিশ্বাস করিবামাত্র সে অসাধ্যসাধন করিতে পারে। তখন সে বিক্ষিত হইয়া দেখে ভয় তাহাকে ভয় দেখাইতেছে না, দুঃখ তাহাকে দুঃখ দিতেছে না, বাধা তাহাকে পরাভূত করিতেছে না, এমন কি, নিষ্ফলতাও তাহাকে নিরস্ত করিতে পারিতেছে না। তখন সে হঠাৎ দেখিতে পায় ত্যাগ তাহার পক্ষে সহজ, ক্লেশ তাহার পক্ষে আনন্দময়, এবং মৃত্যু তাহার পক্ষে অমৃতের সোপান । C বুদ্ধদেব তাহার শিন্যদিগকে উপদেশ দিবার কালে এক সময়ে বলিয়াছিলেন যে, মানুষের মনে কামনা অত্যন্ত বেশি প্রবল, কিন্তু সৌভাগ্যক্রমে তাহার চেয়েও প্রবল