পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৩৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ናisiq}Bጃ ○○○ হেনকালে কনগ্রেসের সময় নিকটবতী হইল। নীলরতনের নিকট চান্দা-সংগ্রহের অনুরোধপত্র আসিল । নবেন্দু লাবণ্যর সহিত মনের আনন্দে নিশ্চিন্তমনে তাঁস খেলিতেছিল। নীলরতন খাতা-হন্তে মধ্যে আসিয়া পড়িয়া কহিল, “একটা সই দিতে হইবে।” পূর্বসংস্কারক্রমে নবেন্দুর মুখ শুকাইয়া গেল। লাবণ্য শশব্যস্ত হইয়া কহিল, “খবরদার, এমন কাজ করিয়ো না, তোমার ঘোড়দৌড়ের মাঠখানা মাটি হইয়া যাইবে।” নবেন্দু আম্ফালন করিয়া কহিল, “সেই ভাবনায় আমার রাত্রে ঘুম হয় না !” নীলরতন আশ্বাস দিয়া কহিল, “তোমার নাম কোনো কাগজে প্ৰকাশ হইবে না ।” লাবণ্য অত্যন্ত চিন্তিত বিজ্ঞভাবে কহিল, “তবু কাজ কী ! কী জানি যদি কথায় কথায়-” নবেন্দু তীব্ৰস্বরে কহিল, “কাগজে প্রকাশ হইলে আমার নাম ক্ষইয়া যাইবে না।” এই বলিয়া নীলরতনের হাত হইতে খাতা টানিয়া একেবারে হাজার টাকা ফস করিয়া সই করিয়া দিল । মনের মধ্যে আশা রহিল, কাগজে সংবাদ বাহির হইবে না । লাবণ্য মাথায় হাত দিয়া কহিল, “করিলে কী ! নবেন্দু দর্পভরে কহিল, “কেন, অন্যায় কী করিয়াছি।” লাবণ্য কহিল, “শেয়ালদ স্টেশনের গার্ড, হােয়াইট-অ্যাবের দোকানের অ্যাসিস্টান্ট, হার্টব্রাদারদের সহিস-সাহেব, ঐরা যদি তোমার উপর রাগ করিয়া অভিমান করিয়া বসেন, যদি তোমার পূজার নিমন্ত্রণে শ্যাম্পেন খাইতে না আসেন, যদি দেখা হইলে তোমার পিঠ না চাপড়ােন ?” নবেন্দু উদ্ধতভাবে কহিল, “তাহা হইলে আমি বাসায় গিয়া মরিয়া থাকিব ।” দিনকয়েক পরেই নবেন্দু প্ৰাতঃকালে চা খাইতে-খাইতে খবরের কাগজ পড়িতেছেন, হঠাৎ চোখে পড়িল এক x স্বাক্ষরিত পত্রপ্রেরক তাহাকে প্রচুর ধন্যবাদ দিয়া কনগ্রেসে চাদার কথা প্ৰকাশ করিয়াছে এবং তাহার মতো লোককে দলে পাইয়া কনগ্রেসের যে কতটা বলবৃদ্ধি হইয়াছে লোকটা তাহারও পরিমাণ নির্ণয় করিতে পারে নাই । কনগ্রেসের বালবৃদ্ধি ! হা স্বৰ্গগত তাত পূর্ণেন্দুশেখর ! কনগ্রেসের বালবৃদ্ধি করিবার জন্যই কি তুমি হতভাগাকে ভারতভূমিতে জন্মদান করিয়াছিলে ! কিন্তু, দুঃখের সঙ্গে সুখও আছে। নবেন্দুর মতো লোক যে যে-সে লোক নহেন, তাহাকে নিজ তীরে তুলিবার জন্য যে এক দিকে ভারতবষীয় ইংরাজ-সম্প্রদায় অপর দিকে কনগ্রেস লালায়িতভাবে ছিপ ফেলিয়া অনিমিষলোচনে বসিয়া আছে, এ কথাটা নিতান্ত ঢাকিয়া রাখিবার কথা নহে। অতএব নবেন্দু হাসিতে হাসিতে কাগজখানা লইয়া লাবণ্যকে দেখাইলেন । কে লিখিয়াছে যেন কিছুই জানে না, এমনি ভাবে লাবণ্য আকাশ হইতে পড়িয়া কহিল, “ওমা, এ যে সমস্তই ফাস করিয়া দিয়াছে ! আহা ! আহা ! তোমার এমন শত্ৰু কে ছিল ! তাহার কলমে যেন ঘুণ ধরে, তাহার কালিতে যেন বালি পড়ে, তাহার কাগজ যেন পোকায় কাটে-” নবেন্দু হাসিয়া কহিল, “আর অভিশাপ দিয়ে না। আমি আমার শক্রকে মার্জনা করিয়া আশীর্বাদ করিতেছি, তাহার সোনার দোয়াত-কলম হয় যেন !” দুইদিন পরে কনগ্রেসের বিপক্ষপক্ষীয় একখানা ইংরাজ-সম্পাদিত ইংরাজি কাগজ ডাকযোগে নবেন্দুর হাতে আসিয়া পৌঁছিলে পড়িয়া দেখিলেন, তাহাতে 'One who knows" স্বাক্ষরে পূর্বোক্ত সংবাদের প্রতিবাদ বাহির হইয়াছে। লেখক লিখিতেছেন যে, নবেন্দুকে যাহারা জানেন তাহারা তাহার সম্বন্ধে এই দুর্নােম-রটনা কখনোই বিশ্বাস করিতে পারেন না ; চিতাবাঘের পক্ষে নিজ চর্মের কৃষ্ণ অন্ধগুলির পরিবর্তন যেমন অসম্ভব নবেন্দুর পক্ষেও কনগ্রেসের দলবৃদ্ধি করা তেমনি। বাবু নবেন্দুশেখরের যথেষ্ট নিজস্ব পদার্থ আছে, তিনি কৰ্মশুন্য উমেদার ও মকেলশূন্য আইনজীবী নহেন। তিনি দুইদিন বিলাতে ঘুরিয়া, বেশভূষা-আচারব্যবহারে অদ্ভুত কপিবৃত্তি করিয়া, স্পৰ্ধাভরে, ইংরেজ-সমাজে প্রবেশোদ্যত হইয়া, অবশেষে ক্ষুধামনে হতাশভাবে ফিরিয়া আসেন নাই, অতএব কেন