পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (একাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৭০৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

গ্ৰন্থপরিচয় ዪgbr6: দিকের দিগন্তে গিরিশ্ৰেণী, সম্মুখে দূরে তোহেরান নগরী বৃক্ষবৃহে আবৃত। এখানে বর্তমান রাজা বাস করেন না, কেননা, এ জায়গাটা তার কর্মক্ষেত্র থেকে দূরে । এ প্রাসাদটি প্রাচীন নয়, বছর ত্ৰিশ আগে তৈরি হয়েছে ।] -বিচিত্রা । পৌষ ১৩৩৯, পৃ. ৭৭০-৭১ ৬৫৮ পৃষ্ঠায় প্রথম বাক্যের পরে খানিকটা আমি ইংরেজিতে বলি, তার পরে তার তর্জমা হয় পারসিকে, এইরকম দু-রঙা দু-টুকরো তালি-দেওয়া আমার বক্তৃতা । আমি যা বলেছিলেম তার মোট কথাটা হচ্ছে এই যে, প্রকৃতির শক্তিভাণ্ডারের দ্বার যুরোপ উদঘাটন করে প্রাণ যাত্রাকে নানা দিক থেকে ঐশ্বর্যশালী করে তুলেছে । এই শক্তির প্রভাবে আজকের দিনে তারা দিগ্বিজয়ী । আমরা প্ৰাচ্যজাতিরা বস্তুজগতে এই শক্তিসাধনায় শৈথিল্যে করেছি, তার ফলে আমাদের দুর্বলতা সমাজের সকল বিভাগেই ব্যাপ্ত । এই সাধনার দীক্ষা যুরোপের কাছ থেকে আমাদের নিতান্তই নেওয়া চাই । কিন্তু সেই সঙ্গেই মনে রাখতে হবে যে কেবলমাত্র বস্তুগত ঐশ্বর্যে মানুষের পরিত্রাণ নেই, তার প্রমাণ আজ য়ুরোপে মারমূর্তি নিয়ে দেখা দিল । পরস্পর ঈর্ষাবিদ্বেযে এবং বিজ্ঞানবাহিনী হিংস্রতার বিভীষিকায় য়ুরোপীয় সভ্যতায় আজ ভূমিকম্প লেগেছে। যুরোপ দেবতার অস্ত্ৰ পেয়েছে, কিন্তু সেই সঙ্গে দেবতার চিত্ত পায় নি। এইরকম দুর্যোগেই "বিমুখ ব্ৰহ্মাস্ত্ৰ আসি অস্ত্রীকেই বধে । দেখা যাচ্ছে, য়ুরোপ নিজের মৃত্যুশেল আশ্চর্য বৈজ্ঞানিক নৈপুণ্যের সঙ্গে তৈরি করে তুলছে । এশিয়াকে আজ ভার নিতে হবে মানুষের মধ্যে এই দেবত্বকে সম্পূৰ্ণ করে তুলতে, কর্মশক্তিকে ও ধর্মশক্তিকে এক করে দিয়ে । পারস্যে আজ নূতন করে জাতিরচনার কাজ আরম্ভ হয়েছে। আমার সৌভাগ্য এই যে, এই নবসৃষ্টির যুগে অতিথিরূপে আমি পারস্যে উপস্থিত, আমি আশা করে এসেছি। এখানে সৃষ্টির যে সংকল্পনা দেখব তার মধ্যে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার পূর্ণািমলনের রূপ আছে। অতীতকালে একদা এশিয়ায় সৃষ্টির যুগ প্রবল শক্তিতে দেখা দিয়েছিল । তখন পারস্য ভারত চীন নিজ নিজ জ্যোতিতে দীপ্যমান হয়ে একটি সম্মিলিত মহাদেশীয় সভ্যতার বিস্তার করেছিল । তখন এশিয়ায় মহতী বাণীর উদ্ভব হয়েছিল এবং মহতী কীর্তির । তখন মাঝে মাঝে এশিয়ার চিত্তে যেন কোটালের বান ডেকে এসেছে, তখন তার বিদ্যার ঐশ্বৰ্য বহু বাধা অতিক্রম করে বহুকাল ধরে বহুদূরদেশে পরিব্যাপ্ত হয়েছে। তার পর এল দুর্দিন, ঐশ্বৰ্যবিনিময়ের বাণিজ্যপথ ক্রমে লুপ্ত হয়ে এল । যুদ্ধে, দুর্ভিক্ষে, বিশ্বনাশা। বর্বরতার নিষ্ঠুর আক্রমণে এশিয়ার মহাদেশীয় বন্ধন ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। তার পর থেকে এশিয়াকে আর মানবিক মহাদেশ বলতে পারি নে— আজি এ কেবল ভৌগোলিক भशप्रe । সেই প্রাচীনযুগের গৌরবকাহিনীর স্বল্পমাত্র নিয়ে অতি দীর্ঘকাল আমাদের দীনভাবে কাটল । আজ এই মহাদেশের নাড়ীতে নাড়ীতে পুনরযৌবনের বেগ যেন আবার স্পন্দিত হয়ে উঠেছে। ভারতবর্ষের কবিকে আজ ইরান যে আহবান করেছে। এ একটি সুলক্ষণ ; এতে প্ৰমাণ হয় যে, এশিয়ায় আত্মপ্রকাশের দায়িত্ববোধ দেশের সীমানাকে অতিক্রম করে দূরে বিতীর্ণ হচ্ছে । এ কথা বলা বাহুল্য যে, এশিয়ার প্রত্যেক দেশ আপন শক্তি প্ৰকৃতি ও প্রয়োজন অনুসারে আপন ঐতিহাসিক সমস্যা স্বয়ং সমাধান করবে, কিন্তু আপনি উন্নতির পথে তারা প্ৰত্যেকে ষে প্ৰদীপ নিয়ে চলবে তার আলোক পরস্পর সম্মিলিত হয়ে জ্ঞানজ্যোতির সমবায় সাধন করবে । চিত্তের প্রকাশ যখন আমাদের থাকে না তখন আমরা আলোকইন তারার মতো, অন্য জ্যোতিষ্কের সঙ্গে আমাদের জ্ঞাতিত্বসম্বন্ধ অবরুদ্ধ। চিত্তের আলো যখন জ্বলে তখনই মানুষের