পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৩০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Sl e , রবীন্দ্র-রচনাবলী করিয়া রাখে, যাহাতে র্তাহার আপিসে যাইতে বিলম্ব না হয় ; আপিস হইতে ফিরিয়া আসিলে তাহার গাড়-গামছা ঠিক করিয়া রাখে এবং রাত্রিকালে তাহার মশারি ঝাড়িয়া দেয় !” আগাগোড়া একটা নীতি-উপদেশের মতো । স্ত্রী হবে কেমন— রোজ এক-এক পাতা ওলটাবে আর এক-একটা নতুন চ্যাপ্টার বেরোবে। নিমাই। অর্থাৎ কোনোদিন বা গৃহমার্জন করবে, কোনোদিন বা স্বামীর পৃষ্ঠমার্জন করবে ! একদিন বা মেঝেতে গোময় লেপন করলে একদিন বা স্বামীর পবিত্র মাথার উপর ঘোল সেচন করলে—পূর্বাহ্লে কিছুই ঠিক করবার জো নেই। চন্দ্রকান্ত । সে যেন হল— আর চেহারাটা কী রকম হবে । বিনোদবিহারী । চেহারাটি বেশ ছিপছিপে, মাটির সঙ্গে অতি অল্পই সম্পর্ক, যেন “সঞ্চারিণী পল্পবিনী লতেব ।” অর্থাৎ যাকে দেখে মনে হবে অতি ক্ষীণবল— অস্তিত্বটুকু কেবল নামমাত্র— অথচ ওইটুকুর মধ্যে যে এত লীলা, এত বল, এত কৌতুক তাই দেখে পলকে পলকে আশ্চর্ষ বোধ হবে। যেন বিদ্যুতের মতো, একটিমাত্র আলোর রেখা— কিন্তু তার ভিতরে কত চাঞ্চল্য, কত হাসি, কত বঞ্জতেজ । চন্দ্রকান্ত । আর বেশি বলতে হবে না— আমি বুঝে নিয়েছি। তুমি চাও পঙ্কর মতো চেদটি অক্ষরে বাধাসাধা, ছিপছিপে ; আমনি, চলতে ফিরতে ছন্দটি রেখে চলে, কিন্তু এদিকে মল্লিনাথ, ভরত শিরোমণি, জগন্নাথ তর্কপঞ্চানন প্রভৃতি বড়ো বড়ো পণ্ডিত র্তার টিকে ভাষ্য করে থই পায় না । বুঝেছ বিনদা, আমিও তাই চাই, কিন্তু চাইলেই তো পাওয়া যায় না— বিনোদবিহারী। কেন, তোমার কপালে তো মন্দ জোটেনি । চন্দ্রকান্ত । মন্দ বলতে সাহস করিনে— কিন্তু ভাই, পদ্য নয় সে গদ্য,—বিধাতা অক্ষর মিলিয়ে তাকে তৈরি করেননি, কলমে যা এসেছে তাই বসিয়ে গেছেন—এই প্রতিদিন যে-ভাষায় কথাবার্তা চলে তাই আর-কি। ওর মধ্যে বেশ একটি ছাদ পাওয়া যাচ্ছে না । নিমাই। আর ছাদে কাজ নেই ভাই। আবার তোমার কী রকম ছাদ সেটাও তো দেখতে হবে। বিনোদ লেখক-মানুষ, ওর মুখে সকলরকম খ্যাপামিই শোভা পায়, ও যদি হঠাৎ মাঝের থেকে বিদ্যুৎ কিংবা অচুইভ ছন্দকে বিয়ে করে বসে ও তাদের সামলাতে পারে, বরঞ্চ ওকে নিয়েই তারা কিছু ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। কিন্তু চন্দরদী, তোমার সঙ্গে একটি আস্ত পদ্য জুড়ে দিলে কি আর রক্ষে ছিল । এক লাইন পষ্ঠ আর এক লাইন গদ্যে কখনো মিল হয় ?