পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (তৃতীয় খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চোখের বালি 8や》 ভৎসন। আশা আর কখনোই মহেন্দ্রকে করে নাই। মহেন্দ্র নিজের অহংকারে আহত হইয়। বিস্মিত বিক্রপের সহিত কহিল, “তোমার কাছে ডাক্তারি শিখিতে হইবে দেখিতেছি ।” আশা এই বিক্রপে তাহার পুঞ্জীভূত বেদনার উপরে হঠাৎ অপ্রত্যাশিত আঘাত পাইল ; তাহার উপরে ঘর অন্ধকার ছিল, তাই সেই চিরকালের নিরুত্তর আশা আজ অসংকোচে উদ্দীপ্ত তেজের সহিত বলিয়া উঠিল, “ডাক্তারি না শেখ, মাকে যত্ন করা শিখিতে পার ।” আশার কাছে এমন জবাব পাইয়া মহেন্দ্রের বিস্ময়ের সীমা রহিল না । এই অনভ্যস্ত তীব্র বাক্যে মহেন্দ্র নিষ্ঠুর হইয়া উঠিল । কহিল, “তোমার বিহারীঠাকুরপোকে কেন এই বাড়িতে আসিতে নিষেধ করিয়াছি, তাহা তো তুমি জান— আবার তাহাকে স্মরণ করিয়াছ বুঝি !” আশা দ্রুতপদে ঘর হইতে চলিয়া গেল । লজ্জার ঝড়ে যেন তাহাকে ঠেলিয়া লইয়া গেল। লজ্জা তাহার নিজের জন্য নহে। অপরাধে যে-ব্যক্তি মগ্ন হইয়া আছে, সে এমন অন্যায় অপবাদ মুখে উচ্চারণ করিতে পারে । এতবড়ো নির্লজ্জতাকে পর্বতপ্রমাণ লজ্জা দিয়াও ঢাকা যায় না । আশা চলিয়া গেলেই মহেন্দ্র নিজের সম্পূর্ণ পরাভব অনুভব করিতে পারিল । আশা যে কোনো কালে কোনো অবস্থাতেই মহেন্দ্রকে এমন ধিক্কার করিতে পারে, তাহা মহেন্দ্র কল্পনাও করিতে পারে নাই। মহেন্দ্ৰ দেখিল, যেখানে তাহার সিংহাসন ছিল সেখানে সে ধুলায় লুটাইতেছে । এতদিন পরে তাহার আশঙ্কা হইল, পাছে আশার বেদনা ঘৃণায় পরিণত হয় । ওদিকে বিহারীর কথা মনে আসিতেই বিনোদিনী সম্বন্ধে চিস্তা তাহাকে অধীর করিয়া তুলিল। বিহারী পশ্চিম হইতে ফিরিয়াছে কি না, কে জানে। ইতিমধ্যে বিনোদিনী তাহার ঠিকানা জানিতেও পারে, বিনোদিনীর সঙ্গে বিহারীর দেখা হওয়াও অসম্ভব নহে মহেন্দ্রের আর প্রতিজ্ঞা রক্ষা হয় না । রাত্রে রাজলক্ষ্মীর বক্ষের কষ্ট বাড়িল, তিনি আর থাকিতে না পারিয়া নিজেই মহেন্দ্রকে ভাকিয়া পাঠাইলেন । কষ্টে বাক্য উচ্চারণ করিয়া কহিলেন, “মহিন, বিহারীকে আমার বড়ো দেখিতে ইচ্ছা হয়, অনেক দিন সে আসে নাই ।” আশা শাশুড়ীকে বাতাস করিতেছিল। সে মুখ নিচু করিয়া রহিল । মহেন্দ্র কহিল, “সে এখানে নাই, পশ্চিমে কোথায় চলিয়া গেছে ।” রাজলক্ষ্মী কহিলেন, “আমার মন বলিতেছে, সে এখানেই আছে, কেবল তোর ՎԶա(:Շ)