পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (ত্রয়োবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

* 外魏邻威 δοθ বারান্দায় বসে কাশীশ্বরী ধোবাকে কাপড় দিচ্ছিল, আমি তাকে ডাক দিলুম ; সে তাড়াতাড়ি ছুটে এসে আমার হাতে নল তুলে দিলে। আমি তাকে বললুম, দেখো, আমার বসবার ঘরের ব্যদিকের আলমারির তিনের থাকে একটা নীল রঙের মলাটদেওয়া মোটা ইংরাজি বই আছে, সেইটে নিয়ে এসে তো। কাশী একটা নীল রঙের বই এনে দিলে ; আমি বললুম "মাঃ, এটা নয় ; সে এর চেয়ে মোটা, আর তার পিঠের দিকে সোনালি অক্ষরে নাম লেখা ’ এবারে সে একটা সবুজ রঙের বই আনলে— সেটা আমি ধপাস করে মেঝের উপর ফেলে দিয়ে রেগে উঠে পড়লুম। তখন কাশীর মুখ এতটুকু হয়ে গেল এবং তার চোখ ছলছল করে উঠল । আমি গিয়ে দেখলুম, তিনের শেলফে বইটা নেই, সেটা আছে পাচের শেলফে । বইটা হাতে করে নিয়ে এসে নিঃশব্দে বিছানায় শুলুম কিন্তু কাশীকে ভুলের কথা কিছু বললুম না । সে মাথা ইেট করে বিমৰ্ষ হয়ে ধোবাকে কাপড় দিতে লাগল এবং নিবুদ্ধিতার দোষে স্বামীর বিশ্রামে ব্যাঘাত করেছে, এই অপরাধ কিছুতেই ভুলতে পারলে না। বাবা ডাকাতি তদন্ত করছেন, আর আমার এই ভাবে দিন যাচ্ছে । এ দিকে আমার সম্বন্ধে পণ্ডিতমশায়ের ব্যবহার আর ভাষা এক মুহূর্তে কতৃর্বাচ্য থেকে ভাববাচ্যে এসে পৌছল এবং সেটা নিরতিশয় সম্ভাববাচ্য। এমন সময় ডাকাতি তদন্ত শেষ হয়ে গেল, বাবা ঘরে ফিরে এলেন । আমি জানি, মা আস্তে আস্তে সময় নিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বাবার বিশেষ প্রিয় তরকারি-রান্নার সঙ্গে সঙ্গে একটু একটু করে সইয়ে সইয়ে কথাটাকে পাড়বেন বলে প্রস্তুত হয়ে ছিলেন। বাবা পণ্ডিতমশায়কে অর্থলুদ্ধ বলে ঘৃণা করতেন ; মা নিশ্চয়ই প্রথমে পণ্ডিতমশায়ের মুদুরকম নিন্দা অথচ তার স্ত্রী ও কস্তার প্রচুর রকমের প্রশংসা করে কথাটার গোড়াপত্তন করতেন। কিন্তু, দুর্ভাগ্যক্রমে পণ্ডিতমশায়ের আনন্দিত প্ৰগলভতায় কথাটা চারি দিকে ছড়িয়ে গিয়েছিল। বিবাহ ষে পাকা, দিনক্ষণ দেখা চলছে, এ কথা তিনি কাউকে জানাতে বাকি রাখেন নি। এমন-কি, বিবাহকালে সেরেস্তাদার বাবুর পাকা দালানটি কয়দিনের জন্তে তার প্রয়োজন হবে, যথাস্থানে সে আলোচনাও তিনি সেরে রেখেছেন। শুভকর্মে সকলেই তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করতে সম্মত হয়েছে । বাবার আদালতের উকিলের দল চাদ করে বিবাহের ব্যয় বহন করতেও রাজি। স্থানীয় এনট্রেন্স-স্কুলের সেক্রেটারি বীরেশ্বরবাবুর তৃতীয় ছেলে তৃতীয় ক্লাসে পড়ে, সে চাদ ও কুমুদের রূপক অবলম্বন করে এরই মধ্যে বিবাহসম্বন্ধে ত্রিপৗছনো একটা কবিতা লিখেছে। সেক্রেটারিবাৰু সেই কবিতাটা নিয়ে রাস্তায় ঘাটে যাকে পেয়েছেন তাকে ধরে ধরে শুনিয়েছেন। ছেলেটির সম্বন্ধে গ্রামের লোক খুব আশান্বিত হয়ে উঠেছে।