পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দশম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৫৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

WОĆ о রবীন্দ্র-রচনাবলী “কেমন করে ?” “আমি ঘর বানিয়েছিলুম। আজ সকালে তোমার কথায় মনে হল তুমি তার মধ্যে পা দিতে কুষ্ঠিত। আজ দু-মাস ধরে মনে-মনে ঘর সাজালুম। তোমাকে ডেকে বললুম, এস বধূ, ঘরে এস। তুমি আজ বধুসজ্জা খসিয়ে ফেললে, বললে, এখানে জায়গা হবে না, বন্ধু, চিরদিন ধরে আমাদের সপ্তপদীগমন হবে।” বনফুলের বটানি আর চলল না । লাবণ্য হঠাং উঠে পড়ে ক্লিষ্টস্বরে বললে, “মিতা, আর নয়, সময় নেই।” Y9 ধূমকেতু এতদিন পরে অমিত একটা কথা আবিষ্কার করেছে যে, লাবণ্যর সঙ্গে তার সম্বন্ধটা শিলঙসুদ্ধ বাঙালি জানে। গভৰ্মেণ্ট আপিসের কেরানিদের প্রধান আলোচ্য বিষয় তাদের জীবিকাভাগ্যগগনে কোন গ্রহ রাজা হৈল কে বা মন্ত্রিবর। এমন সময় তাদের চোখে পড়ল মানবজীবনের জ্যোতির্মগুলে এক যুগ্মতারার আবর্তন, একেবারে ফাস্ট ম্যাগ্নিচুডের আলো। পর্যবেক্ষকদের প্রকৃতি অনুসারে এই দুটি নবদীপ্যমান জ্যোতিষ্কের আগ্নেয়নাট্যের নানাপ্রকার ব্যাখ্যা চলছে । পাহাড়ে হাওয়া খেতে এসে এই ব্যাখ্যার মধ্যে পড়েছিল কুমার মুখুজো-অ্যাটনি । সংক্ষেপে কেউ তাকে বলে কুমার মুখো, কেউ বলে মার মুখে । সিসিদের মিত্ৰগোষ্ঠীর অস্তশ্চর নয় সে, কিন্তু জ্ঞাতি, অর্থাং জানাশোনার দলে । অমিত তাকে ধূমকেতু মুখে নাম দিয়েছিল। তার একটা কারণ, সে এদের দলের বাইরে, তবু সে মাঝে মাঝে এদের কক্ষপথে পুচ্ছ বুলিয়ে যায়। সকলেই আন্দাজ করে, ষে-গ্রহটি তাকে বিশেষ করে টান মারছে তার নাম লিসি। এই নিয়ে সকলেই কৌতুক অনুভব করে, কিন্তু লিসি স্বয়ং এতে ক্রুদ্ধ ও লজ্জিত। তাই লিসি প্রায়ই প্রবল বেগে এর পুচ্চমর্দন করে চলে যায়, কিন্তু দেখতে পাই তাতে ধূমকেতুর ল্যাজার বা মুড়োর কোনোই লোকসান হয় না । অমিত শিলঙের রাস্তায় ঘাটে মাঝে মাঝে কুমার মুখোকে দূর থেকে দেখেছে। তাকে না দেখতে পাওয়া শক্ত । বিলেতে আজও যায় নি বলে তার বিলিতি কায়দা বধু উৎকটভাবে প্রকাশমান । তার মুখে নিরবচ্ছিন্ন একটা দীর্ঘ মোট চুরুট থাকে