পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/১৮৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মালঞ্চ | عانها لا( শেষকালে মাথা নেড়ে বললে, “বউদি, আমি সম্পর্কে ছোটো, কিন্তু বয়সে বড়ো । উড়ো বাতাসে আগাছার বীজ আসে ভেসে, প্রশ্রয় পেলে শিকড় ছড়ায়, তার পরে অণর ওপড়ায় কণর সাধ্যি ।” R “আমাকে উপদেশ দিতে হবে না। আমি তোমার গুরুজন, তোমাকে উপদেশ দিচ্ছি, বিয়ে করে । দেরি কোরে না । এই ফাঙ্কন মাসে ভালো দিন আছে ।” “আমার পাজিতে তিন শো পয়ষট্টি দিনই ভালো দিন। কিন্তু দিন যদি বা থাকে, রাস্তা নেই। আমি একবার গেছি জেলে, এখনও আছি পিছল পথে জেলের কবলটার দিকে । ও পথে প্রজাপতির পেয়াদার চল নেই।” “এখনকার মেয়েরাই বুঝি জেলখানাকে ভয় করে ?” “না করতে পারে কিন্তু সপ্তপদী গমনের রাস্তা ওটা নয়। ও রাস্তায় বধূকে পাশে না রেখে মনের মধ্যে রাখলে জোর পাওয়া যায়। রইল চিরদিন আমার মনে ।” হরলিকস দুধের পাত্র টিপাইয়ের উপর রেখে সরলা চলে যাচ্ছিল । নীরজা বললে, “যেয়ে না, শোনে। সরল, এই ফোটোগ্রাফটা করে । চিনতে পার ?” সরলা বললে, “ও তো আমার ।” “তোমার সেই আগেকার দিনের ছবি । যখন তোমার জেঠামশায়ের ওখানে তোমরা দুজনে বাগানের কাজ করতে। দেখে মনে হচ্ছে, বয়সে পনেরো হবে। মরাঠী মেয়ের মতো মালকোচা দিয়ে শাড়ি পরেছ।” “এ তুমি কোথা থেকে পেলে ।” “দেখেছিলুম ওর একটা ডেস্কের মধ্যে, তখন ভালো করে লক্ষ্য করি নি। আজ সেখান থেকে আনিয়ে নিয়েছি । ঠাকুরপো, তখনকার চেয়ে সরলাকে এখন আরও অনেক ভালো দেখতে হয়েছে। তোমার কী মনে হয় ।” রমেন বললে, “তখন কি কোনো সরলা কোথাও ছিল । অন্তত আমি তাকে জানতুম না। আমার কাছে এখনকার সরলাই একমাত্র সত্য। তুলনা করব কিসের সঙ্গে ।” নীরজা বললে, “ওর এখনকার চেহারা হৃদয়ের কোনো একটা রহস্তে ঘন হয়ে ভরে উঠেছে— যেন যে মেঘ ছিল সাদা তার ভিতর থেকে শ্রাবণের জল আজ ঝরিঝরি করছে- একেই তোমরা রোম্যান্টিক বল, না ঠাকুরপো ?” সরলা চলে যেতে উষ্ঠত হল, নীরজা তাকে বললে, “সরল, একটু বোসে। ঠাকুরপো, একবার পুরুষমাহুষের চোখ দিয়ে সরলাকে দেখে নিই। ওর কী সকলের আগে চোখে পড়ে বলে দেখি ।”