পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (দ্বাদশ খণ্ড) - সুলভ বিশ্বভারতী.pdf/৪৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8S 8 রবীন্দ্র-রচনাবলী আমলের ফিজিক্সের তল পাই নে, তাই তোমাকে ডেকে পাঠানো ; কোয়ান্টম থিয়োরিটা যথাসাধ্য বুঝে নিতে চাই, আমার সেকেলে বিদ্যেসাধ্যি অত্যন্ত বেশি অথর্ব হয়ে পড়েছে।” বলা বাহুল্য, বিদ্যাচর্চা বেশিদূর এগোয় নি। আমার নিশ্চিত বিশ্বাস অরুণা তার বাবার চাতুরী স্পষ্টই ধরেছে আর মনে মনে বলেছে, এমন আদর্শ বাবা অন্য-কোনো পরিবারে আজ পর্যন্ত অবতীর্ণ झश नेि । কোয়ান্টম থিয়োরির ঠিক শুরুতেই বাজল টেলিফোনের ঘণ্টা- ধড়ফড়িয়ে উঠে বললেম, “জরুরি কাজের ডাক । তোমরা এক কাজ করো, ততক্ষণ পার্লার টেনিস খেলো, ছুটি পেলেই আবার আসব ফিরে ।” টেলিফোনে আওয়াজ এল, “হ্যালো, এটা কি বারোশো অমুক নম্বর ।” আমি বললেম, “না, এখানকার নম্বর সাতশো অমুক ।” পরীক্ষণেই নীচের ঘরে গিয়ে একখানা বাসি। খবরের কাগজ তুলে নিয়ে পড়তে শুরু করলেম, অন্ধকার হয়ে এল, দিলেম বাতি জ্বেলে । সুনেত্রা এল ঘরে । অত্যন্ত গভীর মুখ । আমি হেসে বললেম, “মিষ্টিয়ারলজিস্ট তোমার মুখ দেখলে ঝড়ের সিগনাল দিত ।” ঠাট্টায় যোগ না দিয়ে সুনেত্রা বললে, “কেন তুমি শৈলেনকে আমন করে প্রশ্রয় দাও বারে বারে ।” আমি বললেম, “প্রশ্রয় দেবার লোক অদৃশ্যে আছে। ওর অন্তরাত্মায় ।” “ওদের দেখাশোনাটা কিছুদিন বন্ধ রাখতে পারলে এই ছেলেমানুষিটা কেটে যেত আপনা হতেই ৷” “ছেলেমানুষের কসাইগিরি করতে যাবই বা কেন । দিন যাবে, বয়স বাড়বে, এমন ছেলেমানুষি আর তো ফিরে পাবে না কোনোকালে ।” “তুমি গ্রহনক্ষত্র মান না, আমি মানি । ওরা মিলতে পারে না ।” “গ্রহনক্ষত্র কোথায় কী ভাবে মিলেছে চোখে পড়ে না, কিন্তু ওরা দুজনে যে মিলেছে। অন্তরে অন্তরে সেটা দেখা যাচ্ছে খুব স্পষ্ট করেই।” “তুমি বুঝবে না। আমার কথা । যখনই আমরা জন্মাই তখনই আমাদের যথার্থ দোসর ঠিক হয়ে থাকে । মোহের ছলনায় আর-কাউকে যদি স্বীকার করে নিই। তবে তাতেই ঘটে অজ্ঞাত অসতীত্ব । নানা দুঃখে বিপদে তার শান্তি ।” “যথার্থ দোসর চিনিব কী করে ।” “নক্ষত্রের স্বহন্তে স্বাক্ষর-করা দলিল আছে।” ܝܘܢ আর লুকোনো চলল। না । আমার শ্বশুর অজিতকুমার ভট্টাচাৰ্য । বনেদি পণ্ডিত-বংশে তার জন্ম । বাল্যকাল কেটেছে চতুষ্পাঠী আবহাওয়ায় । পরে কলকাতায় এসে কলেজে নিয়েছেন এম. এ. ডিগ্রি গণিতে । ফলিত জ্যোতিষে র্তার যেমন বিশ্বাস ছিল তেমনি ব্যুৎপত্তি। তার বাবা ছিলেন পাকা নৈয়ায়িক, ঈশ্বর তার মতে অসিদ্ধ ; আমার শ্বশুরও দেবদেবী কিছুই মানতেন না তার প্রমাণ পেয়েছি। তার সমস্ত বেকার বিশ্বাস ভিড় করে এসে পড়েছিল গ্ৰহনক্ষত্রের উপর, একরকম গোড়ামি বললেই হয় । এই ঘরে জন্মেছে সুনেত্রা ; বাল্যকাল থেকে তার চার দিকে গ্ৰহনক্ষত্রের কড়া পাহারা । আমি ছিলুম অধ্যাপকের প্রিয় ছাত্র, সুনেত্রাকেও তার পিতা দিতেন শিক্ষা । পরম্পর মেলবার সুযোগ হয়েছিল বার বার। সুযোগটা যে ব্যর্থ হয় নি সে-খবরটা বেতার বিদ্যুদিবার্তায় আমার কাছে ব্যক্ত হয়েছে। আমার শাশুড়ির নাম বিভাবতী । সাবেককালের আওতার মধ্যে তার জন্ম বটে, কিন্তু স্বামীর সংসর্গে তার মন ছিল সংস্কারমুক্ত, স্বচ্ছ । স্বামীর সঙ্গে প্ৰভেদ এই গ্ৰহনক্ষত্র তিনি একেবারেই