পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/২৮৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

২৭২ ৷ রবীন্দ্র-রচনাবলী নন্দকিশোরের চমক লাগল, ওর দাবির সাহস দেখে । বললে, “আচ্ছ। আমি দিয়ে দেব, কিন্তু তার পরে ?” "তার পরে আমি তোমার সঙ্গ কখনও ছাড়ব না।” “কী করবে তুমি।” । ம் “দেখব, যেন কেউ তোমায় ঠকাতে না পারে আমি ছাড়া।” নন্দকিশোর হেসে বললেন, “আচ্ছ বেশ, রইল কথা, এই পরে আমার আংটি।” । কষ্টপাথর আছে ওঁর মনে, তার উপরে দাগ পড়ল একটা দামী ধাতুর। দেখতে পেলেন মেয়েটির ভিতর থেকে ঝক ঝক্‌ করছে ক্যারেক্টরের তেজ— বোঝা গেল ও নিজের দাম নিজে জানে, তাতে একটুমাত্র সংশয় নেই। নন্দকিশোর অনায়াসে বললে, ‘দেব টাকা — দিলে সাত হাজার বুড়ী আইমাকে। মেয়েটিকে ডাকত সবাই সোহিনী ব’লে। পশ্চিমী ছাদের মুকঠোর এবং সুন্দর তার চেহারা । কিন্তু চেহারায় মন টলাবে, নন্দকিশোর সে জাতের লোক ছিলেন না। যৌবনের হাটে মন নিয়ে জুয়ো খেলবার সময়ই ছিল না তার। নন্দকিশোর ওকে যে-দশা থেকে নিয়ে এসেছিলেন সেটা খুব নির্মল নয়, এবং নিভৃত নয়। কিন্তু ঐ একরোখা একগুঁয়ে মানুষ সাংসারিক প্রয়োজন বা প্রথাগত বিচারকে গ্রাহ করতেন না। বন্ধুরা জিজ্ঞাস করত, বিয়ে করেছ কি। উত্তরে শুনত, বিয়েটা খুব বেশি মাত্রায় নয়, সহমতে । লোকে হাসত যখন দেখত, উনি স্ত্রীকে নিজের বিদ্যের ছাচে গড়ে তুলতে উঠেপড়ে লেগে গিয়েছেন। জিজ্ঞাস করত, “ও কি প্রোফেসারি করতে যাবে নাকি ৷” নন্দ বলতেন, "না, ওকে নন্দকিশোরি করতে হবে, সেট যে-সে মেয়ের কাজ নয়।” বলত, “আমি অসবর্ণবিবাহ পছন্দ করি নে।” “সে কী হে ।” 略 “স্বামী হবে এঞ্জিনিয়র আর স্ত্রী হবে কোটনা-কুটনি, এটা মানবধর্মশাস্ত্রে নিষিদ্ধ। ঘরে ঘরে দেখতে পাই দুই আলাদা আলাদা জাতে গাঁটছড়া বাধা, আমি জাত মিলিয়ে নিচ্ছি। পতিব্ৰতা স্ত্রী চাও যদি, আগে ব্রতের মিল করাও।” I २ নন্দকিশোর মারা গেলেন প্রৌঢ় বয়সে কোন-এক দুঃসাহসিক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার অপঘাতে । i সোহিনী সমস্ত কারবার বন্ধ করে দিলে। বিধবা মেয়েদের ঠকিয়ে খাবার ব্যাবসাদার এসে পড়ল চার দিক থেকে। মামলার ফঁাদ র্যাদলে আত্মীয়তার ছিটেফোট৷