পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (পঞ্চবিংশ খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ऊिन नत्रौ ৩২৩ ৷ এনেছি বিলেত থেকে, এই ঘটনা সম্পর্কে মনের মধ্যে তার প্রতিক্রিয় যে হয় নি ত৷ বলতে পারি নে। কিন্তু সন্দেহও ছিল। বিলেতফেরত কোনো কোনো বন্ধুর কাছে শুনেছি, বিলিতি মেয়ের রুচির সঙ্গে বাঙালি মেয়ের রুচি মেলে না। এর পুরুষের রূপে খোজে মেয়েলি মোলায়েম ছাদ । বাঙালি কীর্তিক আর যাই হোক কোনে৷ কালে দেবসেনাপতি ছিল না। এটা বলতে হবে আমাকেও ময়ুরে চড়ালে মানাবে না। এতদিন এসব আলোচনা আমার মনের ধার দিয়েও যায় নি। কিন্তু কয়েকদিন ধরে আমাকে ভাবিয়েছে। রোদেপোড়া আমার রঙ, লম্বা আমার দেহ, শক্ত আমার বাহু, দ্রুত আমার চলন, নাক চিবুক কপাল নিয়ে খুব স্পষ্ট রেখায় আঁকা আমার চেহারা। আমি নবনীনিন্দিত কষিতকাঞ্চনকাস্তি বাঙালি মায়ের অাদরের ধন নই। আমার নিকটবর্তিনী বঙ্গনারীর সঙ্গে আমি মনে মনে ঝগড়া করেছি, একলা ঘরের কোণে বুক ফুলিয়ে বলেছি, ‘তোমার পছন্দ পাই আর নাই পাই একথা নিশ্চয় জেনে৷ তোমার দেশের চেয়ে বড়ে বড়ে দেশের স্বয়ম্বরসভার বরমাল্য উপেক্ষা করে এসেছি।’ এই বানানো ঝগড়ার উষ্মায় একদিন হেসে উঠেছি আপন ছেলেমাস্তুষিতে । আবার এদিকে বিজ্ঞানীর যুক্তিও কাজ করেছে ভিতরে ভিতরে। আপন মনে তর্ক করেছি, একান্ত নিভৃতে থাকাই যদি ওর প্রার্থনীয় তা হলে বারবার আমার স্বম্পষ্ট দৃষ্টিপাত এড়িয়ে এতদিনে ও তো ঠাই বদল করত। কাজ সেরে এ পথ দিয়ে আগে যেতুম একবার মাত্র, আজকাল যখন-তখন যাতায়াত করি, যেন এই জায়গাটাতেই সোনার খনির খবর পেয়েছি। কখনও স্পষ্ট যখন চোখোচোখি হয়েছে আমার বিশ্বাস সেটাকে চার চোখের অপঘাত ব’লে ওর ধারণা হয় নি। এক-একদিন হঠাৎ পিছন ফিরে দেখেছি আমার তিরোগমনের দিকে অচিরা তাকিয়ে আছে, ধরা পড়তেই দ্রুত চোখ ফিরিয়ে নিয়েছে। يقوة তথ্য সংগ্রহের কাজে লাগলুম। পাটনা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার কেন্থি জের সতীর্থ প্রোফেসর আছেন বঙ্কিম। তাকে চিঠি লিখলুম, তোমাদের বেহার সিভিল সার্ভিসে আছেন এক ভদ্রলোক, নাম ভবতোষ। আমার কোনো বন্ধু, তার মেয়ের জন্তে লোকটিকে উদ্বাহবন্ধনে জড়বার দুষ্কর্মে সাহায্য করতে আমাকে অনুরোধ করেছেন। জানতে চাই রাস্ত খোলসা কি না, আর লোকটার মতিগতি কী রকম। উত্তর এল, “পাকা দেয়াল তোলা হয়ে গেছে, রাস্ত বন্ধ । তার পরেও লোকটার মতিগতি সম্বন্ধে দি কৌতুহল থাকে তবে শোনে। এ দেশে থাকতে আমি ধার ছাত্র ছিলুম তার নাম নাই জানলে। তিনি পরম পণ্ডিত আর ঋষিতুল্য লোক। তার নাতনিটিকে যদি দেখ তা হলে জানবে সরস্বতী কেবল ষে আবির্ভূত হয়েছেন।