পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শারদোৎসব 8 Ꮬ ☾ করে বলেছ এতে আমার ভারী আনন্দ হচ্ছে। বিজয়াদিত্যের যে এত শত্রু জমে উঠেছে তা তো আমি জানতেম না w রাজা । তবে বিদায় হই। প্রণাম ! [ প্রস্থান (পুনশ্চ ফিরিয়া আসিয়া) আচ্ছা ঠাকুর, তুমি তো বিজয়াদিত্যকে জান, সত্য করে বলো দেখি, লোকে তার সম্বন্ধে যতটা রটনা করে ততটা কি সত্য ? সন্ন্যাসী । কিছুমাত্র না । লোকে তাকে একটা মস্ত রাজা বলে মনে করে— কিন্তু সে নিতান্তই সাধারণ মানুষের মতো । তার সাজসজ্জা দেখেই লোকে ভুলে গেছে । রাজা । বল কী ঠাকুর, হা হা হা হা! আমিও তাই ঠাউরেছিলেম। অ্যা! নিতান্তই সাধারণ মানুষ ! * সন্ন্যাসী । আমার ইচ্ছে আছে আমি তাকে সেইটে আচ্ছা করে বুঝিয়ে দেব। সে যে রাজার পোশাক প’রে ফাকি দিয়ে অন্ত পাচ জনের চেয়ে নিজেকে মস্ত একট-কিছু বলে মনে করে আমি তার সেই ভুলটা একেবারে ঘুচিয়ে দেব। রাজা । তাই দিয়ে, ঠাকুর, তাই দিয়ে । সন্ন্যাসী। তার ভণ্ডামি আমার কাছে তো কিছু ঢাকা নেই। বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে প্রথম বৃষ্টি হলে পর বীজ বোনবার আগে তার রাজ্যে একটা মহোৎসব হয়। সেদিন সব চাষি গৃহস্থের বনে গিয়ে সীতার পূজা করে সকলে মিলে বনভোজন করে । সেই চাষীদের সঙ্গে এক সঙ্গে পাত পেড়ে খাবার জন্তে বিজয়াদিত্যের প্রাণটা র্কাদে । রাজাই হোক আর যাই হোক, ভিতরে যে চাষাটা আছে সেটা যাবে কোথায় ? সেবারে তো সে রাজবেশ ছেড়ে ওদের সঙ্গে বসে যাবার জন্যে খেপে উঠেছিল। কিন্তু ওর মন্ত্রী আর চাকর-বকিরদের মনে রাজগিরির উচ্চ ভাব ওর চেয়ে অনেক বেশি আছে। তারা হাতে পায়ে ধরে বললে, এ কখনোই হতে পারে না। অর্থাৎ, তাদের এই ভয়টা আছে যে, ওই ছদ্মবেশটা খুলে ফেললেই আসল মানুষটা ধরা পড়ে যাবে। এইজন্যে বিজয়াদিত্যকে নিয়ে তারা বড়ো ভয়ে ভয়েই থাকে— কোনদিন তার সমস্ত ফাস হয়ে যায় এই এক বিষম ভাবনা ৷ ' v. রাজা। ঠাকুর, তুমি সব ফাস করে দাও। ও যে মিথ্যে রাজা, ভূয়ে রাজা, সে যেন আর ছাপা না থাকে । ওর বড়ো অহংকার হয়েছে। সন্ন্যাসী। আমি তো সেই চেষ্টাতেই আছি। তুমি নিশ্চিন্ত থাকে, যতক্ষণ না আমার অভিপ্রায় সিদ্ধ হয় আমি সহজে ছাড়ব না । রাজা । প্রণাম । * to [ প্রস্থান १1२१