পাতা:রবীন্দ্র-রচনাবলী (সপ্তম খণ্ড) - বিশ্বভারতী.pdf/৪২৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

se- রবীক্স-রচনাবলী .* i এটাকে তুলে ধরেছি, আমার বুকের ভিতরে যেন গুরুগুরু করছে। আচ্ছা ঠাকুর, বিজয়াদিত্য কেমন লোক বলে তো। তাকে বিক্রি করতে গেলে সে তো দাম না দিয়ে এটা আমার কাছ থেকে জোর করে কেড়ে নেবে না? আমার ওই এক মুশকিল হয়েছে। আমি এটা বেচতেও পারছি নে, রাখতেও পারছি নে, এর জন্যে আমার রাত্রে ঘুম হয় না। বিজয়াদিত্যকে তুমি বিশ্বাস কর? نر সন্ন্যাসী। সব সময়েই কি তাকে বিশ্বাস করা যায় ? লক্ষেশ্বর। সেই তো মুশকিলের কথা। আমি দেখছি এটা মাটিতেই পোতা থাকবে। হঠাৎ কোনদিন মরে যাব, কেউ সন্ধানও পাবে না। সন্ন্যাসী । রাজাও না, সম্রাটও না, ওই মাটিই সব ফাকি দিয়ে নেবে। তোমাকেও নেবে, আমাকেও নেবে। লক্ষেশ্বর। তা নিক গে ! কিন্তু, আমার কেবলই ভাবনা হয়, আমি মরে গেলে পর কোথা থেকে কে এসে হঠাৎ হয়তে খুড়তে খুড়তে ওটা পেয়ে যাবে। যাই হোক ঠাকুর, কিন্তু তোমার মুখে ওই সোনার পদ্মর কথাটা আমার কাছে বড়ো ভালো লাগল। আমার কেমন মনে হচ্ছে, ওটা তুমি হয়তো খুজে বের করতে পারবে। কিন্তু, তা হোক গে, আমি তোমার চেলা হতে পারব না। প্রণাম । [ প্রস্থান ঠাকুরদাদার প্রবেশ সন্ন্যাসী। ঠাকুর্দা, আজ অনেক দিন পরে একটি কথা খুব স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি— সেটি তোমাকে খুলে না বলে থাকতে পারছি নে । ঠাকুরদাদা। আমার প্রতি ঠাকুরের বড়ো দয়। সন্ন্যাসী। আমি অনেক দিন ভেবেছি জগং এমন আশ্চর্য সুন্দর কেন । কিছুই ভেবে পাই নি। আজ স্পষ্ট প্রত্যক্ষ দেখতে পাচ্ছি— জগৎ আনন্দের ঋণ শোধ করছে। বড়ো সহজে করছে না, নিজের সমস্ত শক্তি দিয়ে সমস্ত ত্যাগ করে করছে। সেইজন্যেই ধানের খেত এমন সবুজ ঐশ্বর্ষে ভরে উঠেছে, বেতসিনীর নির্মল জল এমন কানায় কানায় পরিপূর্ণ। কোথাও সাধনার এতটুকু বিশ্রাম নেই, সেইজন্তেই এত সৌন্দর্য। ঠাকুরদাদা। এক দিকে অনন্ত ভাণ্ডার থেকে তিনি কেবলই ঢেলে দিচ্ছেন, জারএক দিকে কঠিন দুঃখে তারই শোধ চলছে। সেই দুঃখের আনন্দ এবং সৌন্দর্য যে কী সে কথা তোমার কাছে পূর্বেই শুনেছি। প্রভু, কেবল এই দুঃখের জোরেই পাওয়ার সঙ্গে দেওয়ার ওজন বেশ সমান থেকে যাচ্ছে, মিলনটি এমন সুন্দর হয়ে উঠেছে। ।