পাতা:রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র প্রথম খণ্ড.djvu/৪২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

8ቖ.. রামেন্দ্রসুন্দর রচনাসমগ্র মহাকাব্যের উৎপত্তির প্রতিরোধ করে। আধুনিক সভ্যতা কবিত্ব স্বষ্টির অন্তরায় নহে, কিন্তু মহাকাব্য স্বষ্টির বোধ হয় অন্তরায় । এখন কৰ্ম্মযন্ত্রে ভ্রমমাণ মনুষ্যকে তাহার নিরবকাশ জীবনের কথঞ্চিৎলব্ধ অবসরের ক্ষুদ্র মুহূৰ্ত্তগুলিকে খণ্ড কাব্যের ও খণ্ড সৌন্দর্ঘ্যের জাল ও বৈচিত্র্য দ্বারা পূর্ণ করিতে হয়, বৃহৎ পদার্থে দৃষ্টি আবদ্ধ রাখিয়া তাহার বিশাল সৌন্দর্য্যের উপভোগের অবকাশ থাকে না । সেই জন্যই বোধ হয়, সভ্য সমাজে শেকৃসপীয়র জন্মিয়াছেন, কিন্তু হোমার জন্মেন নাই বা বাল্মীকি জন্মেন নাই। ইহাতে মনুষ্য জাতির ক্ষতি কি লাভ, তাহা গণনার অবসর লেখকের নাই । আমরা যাহা পাইয়াছি, তাহাতেই আমাদিগকে তৃপ্ত থাকিতে হইবে। সংসারের স্রোত উন্টাইবার ক্ষমতা আমাদের নাই।” আমরা সহস্ৰ চেষ্টা করিলেও মহাকবির উৎপাদনে সমর্থ হইব না। তবে কাল নিববধি ও পৃথ্বী বিপুল ; আবার যদি কালের স্রোতে মহাকবির উৎপত্তি ঘটে, তাঁহাতেও আমর। বিস্মিত হইব না । (বঙ্গদর্শন,* পৌষ ১৩০৯)। আমিষ ভোজন আমিষ ভোজনের কৰ্ত্তব্যত লইয়া অনেক বিচার হইয়া গিয়াছে। বর্তমান প্রবন্ধে ও যে মীমাংস হষ্টবে, লেখকের এরূপ দুবাশ নাই । তিন দিকৃ হইতে এই বিচারে প্রবৃত্ত হইতে হয়। শরীর রক্ষাব কথা বিজ্ঞানের বিষয় ; খরচের কথা অর্থশাস্বের বিযয় ; তার পর ধৰ্ম্মাধৰ্ম্মের কথা । বিজ্ঞানের কথাটা আগে শেষ করা যাক । সংক্ষেপে বলা যাইতে পারে, মহম্মশরীবের উপাদান অনেকটা কয়ল, অনেকটা জল, খানিকট ছাই। কাজেই খাদ্য সামগ্রীতে এই তিন পদার্থ থাক। দরকার । তিন উপাদানের মধ্যে কয়লাট এক অর্থে প্রধান। শরীরের তাপ রক্ষার জন্য কয়লা পোড়াইতে হয় ; কাজকৰ্ম্ম কবিতে হইলে কয়লা পোড়াইতে হয় ; সেই জন্য শরীরের মধ্যে প্রতিনিয়ত কয়লা পোড়ে। শরীর একটা এঞ্জিন সদৃশ । সেই এঞ্জিনটা গঠন করিতে থানিকট কয়লা ও ছাই ও জলের প্রয়োজন। এই তিন সামগ্রী একত্ৰযোগে মনুষ্যশরীর নিৰ্ম্মাণে লাগে। দুঃখের বিষয়, আমরা কয়লা ও ছাই, এই দুই পদার্থ হজম করিতে পারি না, অন্য উপায়ে শরীরমধ্যে গ্রহণ করি। উদ্ভিদেরা বায়ু হইতে কয়লা সংগ্রহ করে, মাটি হইতে ছাই ও জল সংগ্রহ করে । এই তিন পদার্থ মিশিয়া জটিল উদ্ভিদদেহ নিৰ্ম্মিত হয়। প্রাণী আবার উদ্ভিদদেহ আত্মসাৎ করিয়া ঐ তিন পদার্থকে আরও জটিলতর করিয়া মিশাইয় ফেলে ও আপন শরীর নির্মাণ করে। সামান্য কয়লা, ছাই ও জলকে উদ্ভিজ্জে পরিণত করিতে বিশেষ প্রয়াস আবশ্যক, স্বয়ং সুর্য্যদেব ইহাতে সহায় । উদ্ভিদদেহকে প্রাণিদেহে পরিণত করিতেও প্রয়াসের দরকার ; কিন্তু প্রাণিদেহকে প্রাণিদেহে পরিণত করিতে তত প্রয়াস লাগে না। প্রাণীর দুই শ্রেণী । একশ্রেণী নিরুপায় ও নিৰ্ব্বোধ ; ইহারা কায়ক্লেশে উদ্ভিজ্জ আহার করিয়া উদ্ভিদদেহকে প্রাণিদেহে পরিণত করে। আর এক শ্রেণী চালাক ; ইহার বিনা আয়াসে বা অনায়াসে অন্য প্রাণীর দেহকে আত্মস্মাৎ করিয়া নিজদেহে পরিণত করে।