পাতা:শরৎ সাহিত্য সংগ্রহ (দশম সম্ভার).djvu/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শরৎ-সাহিত্য-সংগ্ৰহ মনোরমা যথানিৰ্দ্দিষ্ট কর্তব্য সমাপন করিয়া স্বস্থানে ফিরিয়া আসিয়া উপবেশন করিল। গোকুল বিহবলবিবর্ণ মুখে একবার স্ত্রীর প্রতি, একবার শ্বশুরের প্রতি চাহিতে লাগিল । এতক্ষণ ধরিয়া পিতা-পুত্রীতে যত কথা হইল, তাহার একটা বর্ণও গোকুল বুঝিতে পারিল না। এ কাহাদের কথা, কাহার ঘরে মামলা চুকিল, কাগকে গল টিপিয়া কে বাহির করিতে চায়, কাহার কি সৰ্ব্বনাশ হইল—প্রভৃতি ইসারা-ইঙ্গিতের বিন্দুমাত্র তাৎপৰ্য্য গ্রহণ করিতে না পারিয়া একেবারে আড়ষ্ট হইয়া উঠিল । নিমাই কহিলেন, দাড়িয়ে রইলে কেন বাবাজী, একটু স্থির হয়ে বসো—দুটো কথাবার্তা হয়ে যাক । গোকুল সেইখানে বসিয়া পড়িল । তিনি বলিতে লাগিলেন, এই তোমাদের স্বসময় । যা করে নিতে পার বাবা এইবেল। কিন্তু একটা সৰ্ব্বনেশে মকদ্দমা যে বাধবে, সেও চোখের উপরই দেখতে পাচ্চি তা বাধুক, আমি তাতে ভয় খাইনে—সে জানে হাটখোলার যত্ন উকিল আর তারিণী মোক্তার । বদিপাড়ার নিমাই রায়ের নাম শুনলে বড় বড় উকিল ব্যারিস্টার কীেস্থলীর মুখ শুকিয়ে যায়—তা এ তে একফোট ছোড়া— ন হয় দু’পাত ইংরিজিই পড়েচে । গোকুল আর থাকিতে না পারিয়া সভয়ে সবিনয়ে প্রশ্ন করিল, আপনি কার কথা বলচেন ? কাদের মকদ্দমা ? এবার অবাক হইবার পালা—বদিপাড়ার নিমাই রায়ের ! প্রশ্ন শুনিয়া তিনি গম্ভীর বিস্ময়ে গোকুলের মূখের দিকে তাকাইয়া রছিলেন । মনোরম ব্যাকুল হইয়া সজোরে বলিয়া উঠিল, দেখলে বাবা, যা বলেচি তাই । জিজ্ঞাসা করচেন কার মোকদ্দমা ! তোমার দিব্যি করে বলচি বাবা, এর মত সোজা মানুষ আর ভূ-ভারতে নেই। একে যে ঠাকুরপো ঠকিয়ে সৰ্ব্বস্ব নেবে, সে কি বেশী কথা ? তুমি এসেচ, এই যা ভরসা, নইলে সোম-বচ্ছরের মধ্যে দেখতে পেতে বাবা, তোমার নাতি-নাতকুড়ের রাস্তায় দাড়িয়েচে । নিমাই নিশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, তাই বটে । তা যাক, আর সে ভয় নেই— আমি এসে পড়েচি ৷ কিন্তু তোমাদের আড়তের ঐ-সব চকোক্তি-ফক্কোক্তিকে আমি আগে তাড়াব । ওরা সব হচ্ছে—বরের মাসী কনের পিসী, বুঝলে না মা । ভেতরে ভেতরে যদি না ওরা তোমার বিনোদের দলে যোগ দেয় ত আমার নামই নিমাই রায় নয়। লোকের ছায়া দেখলে তার মনের কথা বলতে পারি। —বলিয়াই নিমাই একবার গোকুলের প্রতি, একবার কন্যার প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে লাগিলেন । Soo