পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

তৃতীয় অধ্যায় :বৈদ্য ও কায়স্থাদি বংশ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত ১৬৫ করিতে লাগিলেন। অবশেষে এক ক্ষেীরিককে বাধ্য করিয়া এই পাপকার্য্যে প্রণোদিত করিলেন। ক্ষৌরিক একদা ফকিরকে ক্ষেীর করিতে আসিয়া স্বীয় অভিসন্ধি সাধনের অবসর অনুসন্ধান করিতে লাগিল, কিন্তু ভয়ে তাহার সৰ্ব্বাঙ্গ কম্পিত হইতে লাগিল—দেহ অবশ হইয়া গেল । তদবস্থায়ও সে ফকিরের গলদেশে ক্ষুর বসাইয়া দিতে চেষ্টা পাইল, কিন্তু উদ্দেশ্য ব্যর্থ হইল—ফকিরের কিছুই হইল না। ক্ষৌরিক ভীত হইল, তাহার অক্ষমতা ফকিরের দৈবপ্রভাবসঞ্জাত বলিয়া বোধ করিল এবং দামদের কুমন্ত্রণা প্রকাশ পূৰ্ব্বক সে ফকিরের পায়ে পড়িয়া ক্ষমা প্রার্থনা করিতে লাগিল । ফকির তখন স্বাভাবিক গাম্ভীর্য্যের সহিত বলিলেন, “তোমার অপরাধ নাই; দামদিগকে বলিও, তাহাদের আর মঙ্গল নাই। এ দেশ আদিত্যেদেরই হইবে। দামেরা মঙ্গল কামনা করিলে ত্রিরাত্র মধ্যে এদেশ ত্যাগ করুক।” ক্ষেীরিক কাপিতে কাপিতে তথা হইতে আসিল ও ফকিরের দৈবশক্তি ও মাহত্যের কথা অতিরঞ্জিত রূপে দামদের কাছে বর্ণন করিল। তারপর ফকিরের ক্ষমতা ও তাহার ভয় প্রদর্শক বাক্য বলিল। দামেরা নাপিতের কথা শুনিয়া ভীত হইয়া পড়িলেন এবং বাস্তবিকই সে দেশ ছাড়িয়া চলিয়া গেলেন। ফকিরের উপদেশে আদিত্য বন পরিষ্কৃত করিয়া প্রজা বসাইলেন ও সে দেশের মালিক হইয়া গেলেন । ফকির আকবর তখন সেই নিৰ্জ্জন স্থানে এক “মোকাম" প্রস্তুত করিয়া ঈশ্বর চিন্তায় রত হইলেন। তাহার মাহাত্ম্য চতুৰ্দ্দিকে প্রচারিত হইল। কথিত আছে, তাহার প্রভাবে বনের বাঘ পোষিত পশুর মত প্রায়শঃ তাহার মোকামে আসিত । তিনি সাধন বলে অতি দীর্ঘ জীবন লাভ করিয়াছিলেন, হররামের প্রপৌত্রকে দেখিয়া তিনি মৃত্যুমুখে পতিত হন। তৎকাল পর্যন্ত আদিত্য বংশীয়গণ তাহার উপদেশ ও আশীৰ্ব্বাদ প্রাপ্ত হইয়াছিলেন । তাহারা তাহার দেহান্তরের পর তদীয় মোকাম ইষ্টক প্রাচীরে বেষ্টিত করিয়া, সমাধিস্থল সুন্দররাপে বাধাইয়া দেন। এই মোকামের প্রতি তদেশীয় হিন্দু মোসলমান গণের তুল্যভাবে ভক্তি দেখা যায়। পরবর্তী কথা হররামের পরবৰ্ত্তিগণ মধ্যে লক্ষ্মী ও রঘুবর বিশেষ বিখ্যাত। ইহারা এদেশে ব্রাহ্মণ স্থাপন করিয়াছিলেন বলিয়া তাহদের নাম অদ্যপি লোকের স্মৃতিপথারূঢ় রহিয়াছে। তাহার পর কাশীশ্বর আদিত্যের কথা শুনা যায়। কথিত আছে যে তিনি বড়ই মাংসপ্রিয় ছিলেন, তাদৃশ মাংসপ্রিয়তা কদাচ দৃষ্ট হয়; তাহার আহাৰ্য মাংস নিত্য যোগাইতে বহুলোক নিযুক্ত ছিল। কাশীশ্বরের পুত্রের নাম রামেশ্বর আদিত্য। ইনি তত্ৰত্য চৌধুরাই সনন্দ প্রাপ্ত হন। চৌধুরাই জায়গীর ব্যতীত তিনি হাতী খেদার জন্য খালিসা ভূমিও প্রাপ্ত হন। খেদার কর স্বরূপ প্রতিবৎসর তাহাকে নবাব সরকারে একটি হাতী দিতে হইত। রামেশ্বর চৌধুরী ছোটলিখাতে বিভিন্ন জাতীয় লোকের জন্য ভিন্ন ভিন্ন গ্রাম স্থাপন করেন। কিন্তু যে সেন বংশীয়গণ সহ একত্রে এতদিন ছিলেন, কোন কারণে তাহাদের সহিত রামেশ্বরের মনোমালিন্য উপস্থিত হওয়ায়, তাহারা তথা হইতে পঞ্চখণ্ডের সুপাতলা গমন করেন। ছোটলিখাতে সেনদের যে বাড়ী ছিল, তাহা এক্ষণে জঙ্গলের অন্তরালে লুক্কায়িত। আদিত্যদের পুরাতন বাড়িরও—অবস্থা তদ্রুপ। সেনেরা ছোটলিখা ত্যাগ করিলে, দেশে ভট্টলোক স্থাপনের বাসনা রামেশ্বরের মনে প্রবল হইয়া উঠে। তাহার এক বিবাহ যোগ্য কন্যা ছিল, চৈতন্যদাস নামক একজন কায়স্থ বৈষ্ণবের ভেখ ত্যাগ করাইয়া তৎকরে তিনি সেই দুহিতার বিবাহ দেন।