পাতা:শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত (উত্তরাংশ) - অচ্যুতচরণ চৌধুরী তত্ত্বনিধি.pdf/১৭৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৭৬ শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত তৃতীয় ভাগ-দ্বিতীয় খণ্ড নির্দেশ উপলক্ষে “সোয়াই নীলাম ও খাস ও খারিজ দাখিল তালুকাত নজর আন্দা” এইরূপ বিশিষ্ট বাক্যাবলী (terms) হইতেই ইহা বুঝিতে পারা যায়। প্রতাপগড়ের জমিদারবর্গ প্রথমে মোসলমান ছিলেন, তাহাদের বিবরণ পূৰ্ব্বাংশে বলা গিয়াছে। কালক্রমে তাহাদের অবস্থা হীন হইয়া পড়িলে, তাহাদের তাবৎ সম্পত্তি জফরগড়ের অন্যতম ভূম্যধিকারী হিন্দু চৌধুরীদের হস্তগত হয়। প্রতাপগড়ের ভূমি কি সূত্রে তাহাদের হস্তগত হইয়াছিল, ঐ বিশিষ্ট বাক্যাবলী তাহার ইতিহাস বহন করিতেছে। বংশাখ্যান ও সংজ্ঞা সমূহের অর্থ প্রতাপগড়ের বিবরণোপলক্ষে পূৰ্ব্বে১৩ ঘিলাছড়াগত পাটওয়ারি বংশজ বিনন্দরাম দেবের কনিষ্ঠ পুত্র৯৪ হরিদাস ও তৎপুত্র কানুরামের কাহিনী কীৰ্ত্তন করা হইয়াছে, ইনিই স্বয়ং চৌধুরাই প্রাপ্ত হইয়াছিলেন। কানুরামের তিন সহোদর ভ্রাতা ছিলেন। তাহাদের নাম যথাক্রমে কেশবরাম, মণিরাম ও শঙ্কররাম। কেশবরাম সৰ্ব্বজ্যেষ্ঠ ও কানুরাম সৰ্ব্বকনিষ্ঠ ছিলেন। কেশবরামের পুত্র হুলাসরাম ও আকুতরাম; মণিরামের পুত্র মায়ারাম ও মাণিক্যরাম এবং শঙ্কররামের পুত্রের নাম ব্রজুরাম । কানুরামের পুত্র ফকিরচন্দ্র ও গৌরীচন্দ্র, ইহার নামোল্লেখ পূৰ্ব্বাংশে করিয়াছি ॥১৫ ইহারা প্রত্যেকেই ক্ষমতাবান ব্যক্তি ছিলেন, ইহাদের কৃতিত্বে জফরগড় পরগণার কিয়দংশ এবং দস্তখতাদি সহ সমগ্র প্রতাপগড় পরগণা তাহাদের জমিদারী ভুক্ত হয়। ইংরেজ রাজত্বের প্রথমভাগে যখন প্রতাপগড়ের মোসলমান জমিদারদের অবস্থা হীন হইয়া পড়িয়াছিল, তখন রাজস্ব বাকিতে তত্ৰত্য ১নং এবং ৫৩নং তালুকদ্বয় নীলাম হইয়া যায়, কেশবরামের পুত্র হুসালরাম এবং মণিরাম যথাক্রমে দুইটি তালুক ক্রয় করেন (১২০৬ বাংলা); নীলামে বিক্রয় হইয়াছিল বলিয়া তালুকদ্বয় কালেক্টরীর কাগজপত্রে তদবধি "নীলাম তাং" নামে খ্যাত হয় । প্রতাপগড়ের ৯নং এবং ১৬নং তালকদ্বয়ও এইরূপই রাজস্ব বাকিতে নীলাম হয়, কিন্তু এই তালুকদ্বয়ের জন্য কোন ক্রেতা উপস্থিত না হওয়ায়, উহা গবর্ণমেণ্টের খাস (স্বত্ব) গণ্য হয়। শ্রীহট্টের কালেক্টর এই সংবাদ রেভিনিউ বোর্ডে জ্ঞাপন করিলে, ঐ তালুকদ্বয় পূৰ্ব্ব জমাতে যে কোন প্রার্থীকে বন্দোবস্ত দিতে বোর্ড আদেশ দেন; তদনুসারে মণিরাম নিজপুত্র মায়ারাম ও মাণিক্য রামের নামে তাহা বন্দোবস্ত আনেন ১৬ তদবধি এই তালুকদ্বয় "খাস তালুক” নামে খ্যাত হয় । ৩৩নং, ৩৪নং ও ৫৫নং তালুক ত্রয় অভাব বশতঃ পূৰ্ব্ব অধিকারিগণ বিক্রয় করেন। ৩৩নং ও ৩৪নং তালুকদ্বয় কানুরাম চৌধুরী ১৭৯৯/১৮০০ খৃষ্টাব্দে ক্রয় করেন এবং পরবর্ষেই “ইন্তিকালি" (নামজারি) করিয়া, কালেক্টরীতে পূৰ্ব্বমালিকের নাম “খারিজ" করতঃ নিজ নামে ১৩. শ্রীহট্টের ইতিবৃত্ত পূৰ্ব্বাংশ ২য় ভাগ ২য় খণ্ড ১১শ অধ্যায় দেখ। ১৪. বিনন্দ রামের জ্যেষ্ঠপুত্র সোণা রামের বংশধরবর্গ এখনও ঘিলাছড়া বাসী। ১৫. কানু রামের সন্তানাদি না হওয়ায় তিনি চিন্তিত থাকিতেন, তদৃষ্টে জনৈক ফকির একটা কদলিফল তাহার স্ত্রীকে ভক্ষণ করিতে দেন । এই ফল ভক্ষণে পুত্র হওয়ায় ফকিরের নামে জ্যেষ্ঠ পুত্রের নাম রাখা হয়। ১৬. ৯নং তালুকটি শ্রীহট্টের স্বনামধন্য “বাবু মুরারি চাদ", বন্দোবস্ত গ্রহণ করিয়াছিলেন, তাহার নিকট হইতেই মৈনার চৌধুরীবর্গ পরে আনয়ন করেন ।